বুধবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাদক ও অপরাধের জঞ্জাল
এ এইচ এম ফারুক
প্রকাশ: রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:১৬ পিএম
গত আট বছরে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। কিশোরদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংও। তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে দিনে গড়ে ৫৪,৮৮৪ পিস ইয়াবা কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। ইয়াবা ছাড়াও ক্রিস্টাল মেথ (আইস), হেরোইন, কোকেন, গাঁজা, আফিম, বিদেশি মদ, ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক আসছে। সীমান্ত পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে মাদকের চালান হাত বদলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তরেখা ২৭১ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার নাফ নদ এবং ২০৮ কিলোমিটার পাহাড়ি স্থলপথ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, প্রতিবছর মাদক উদ্ধারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পথঘাটের পরিচিতি ও ভাষাগত সুবিধার কারণে মাদক পাচারের প্রধান বাহক রোহিঙ্গারা। বিজিবির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে আসা মাদকের চালান এপারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ও হাত বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৩ আগস্ট কক্সবাজার রিজিয়নে এক বছরে উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়।

উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের মধ্যে ছিল দুই কোটি ৩৩ হাজার ৯৪৯ পিস ইয়াবা, ১৪০ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ২৫.৯৯৮ কেজি হেরোইন, ৪.৪০৫ কেজি কোকেন, ৫২.৮ কেজি গাঁজা, চার কেজি আফিম, ৮০০ পিস টার্গেট ট্যাবলেট, ২২ হাজার ১৫৫ বোতল বিদেশি মদ, ৬১ হাজার ৪৯১ ক্যান বিয়ার, ১৬৯ বোতল ফেনসিডিল, এক হাজার ৭৯৯ লিটার বাংলা মদ এবং দুই বোতল হুইস্কি। হিসাব করলে দেখা গেছে, দিনে গড়ে ৫৪,৮৮৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে মাদক পাচারে রোহিঙ্গাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বিজিবি ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়া মাদক কারবারির ৮০ শতাংশই রোহিঙ্গা।

উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে রয়েছে মাদক মজুদকেন্দ্র, যা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাদক সরবরাহ করা হয়। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা কেবল শিবিরে মাদক আনেই থামছে না, তারা বিভিন্ন এলাকায় চালান পৌঁছে দিচ্ছে। এমনই একজন মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তিনি রোহিঙ্গা শিবির থেকে বের হয়ে ইয়াবার লাভে মহেশখালী গিয়ে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় অর্জন করেছেন। পরে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী ইসলামপুরে উনি ও তাঁর সহযোগীরা ধর্মীয় শিক্ষক এবং ফার্মেসি ব্যবসার আড়ালে মাদক কারবার চালাচ্ছেন।

স্থানীয়দের মতে, ইসলামপুরের ও বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইয়াবা কারবারে কোটিপতি হয়েছেন বহু ব্যক্তি। তাদের মধ্যে হামিদ উল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ইলিয়াছ, আজিজ, হামিদুল্লাহ, হাবিবুল্লাহসহ আরও অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারিরা কক্সবাজার শহরের ইসলামপুরে সক্রিয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব ইয়াবা কারবারি রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই শিবিরের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে রাত যাপন করে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার বাসা পরিবর্তন করে।

অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য


২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা ঢল নামার সময় কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দারা আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের নিজের পাতের ভাত ও নিজের বিছানা পেতে দিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের জন্য স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছিল নিজেদের বাড়িঘরের আঙ্গিনায়ও। অথচ আজ ওই সময়ের আশ্রয়হীন রোহিঙ্গারাই স্থানীয় লোকদের ওপর হামলে পড়ছে। রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের অপহরণ করে আদায় করছে মুক্তিপণের অর্থ। রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারাও এসব সন্ত্রাসী ও ডাকাতদলের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। টেকনাফ-উখিয়ার লোকসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। আর উপজেলা দুটির ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরসহ আশপাশে রয়েছে তারও দ্বিগুণ- প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু হয়ে রোহিঙ্গাদের কাছেই অসহায় হয়ে পড়েছেন। রোহিঙ্গা শিবির ও সীমান্তের পাহাড়ে রয়েছে কমপক্ষে সাতটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ ছাড়াও রয়েছে টেকনাফের পাহাড়ে আরো প্রায় অর্ধশত ডাকাতদল। স্থানীয় সূত্র জানায়,  এসব দলে নেতৃত্ব দিচ্ছে রোহিঙ্গারাই। 

রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক সাতটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে রয়েছে—আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশন বা এআরএসও, আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি বা এআরএ, ইসলামী মাহাজ, আরাকান রোহিঙ্গা লিবারেশন আর্মি ও কম্পানি গ্রুপ। এসব দলের ক্যাডাররাও মাদক কারবারে জড়িত। এসংক্রান্ত তথ্য রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে। এসব সংগঠন আধিপত্য বিস্তার, অস্ত্র ও মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনায় পরস্পরের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন টেকনাফের পাহাড়ে রোহিঙ্গা ডাকাতরা স্থানীয়দের যোগসাজশে এলাকার লোকজনকে অপহরণ করে আদায় করছে মুক্তিপণ। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার টেকনাফে সাত ব্যক্তি অপহৃত হন। তার মধ্যে গত শনিবার বিকেল পর্যন্ত পাঁচজন মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্তি পান। তবে গতকাল পর্যন্ত অন্য দুজনের সন্ধান মেলেনি।

তিন শতাধিক খুন

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ২৩১টি মামলা করা হয়েছে, যেখানে খুনের মামলা হয়েছে ১৫টি। এসব মামলার বিপরীতে হত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। অনেক ক্ষেত্রে একটি ঘটনায় একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মাদকসংক্রান্ত মামলা হয়েছে ১১০টি। একই সময় অপহরণসংক্রান্ত ১৬টি ও ধর্ষণসংক্রান্ত মামলা করা হয়েছে ১২টি। তিনি জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক খুনের ঘটনায় ২৮৭টি মামলা করা হয়েছে।


আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
শেষের গোলে হেরে ইউরোপের ফুটবলের স্বাদ নিল মেয়েরা
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য-চীন থেকে আসছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
ইউরোপ যুদ্ধ চাইলে প্রস্তুত আছি: পুতিন
খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তিন বাহিনী প্রধান
শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আজও ডেঙ্গুতে দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৬৫
তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে সরকার এখনো কিছু জানে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
দুপুরে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাবে বিএনপি
গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি
ডাক্তারদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft