
ব্রাজিলের বেলেম শহরে গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন ও প্যারিস চুক্তির ৩০তম অধিবেশন হচ্ছে কপ৩০। এ সম্মেলন স্বাভাবিক নিয়মে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলার কথা। আমাজন অরণ্যের তীরে ব্রাজিলের বেলেমে এ সম্মেলনে বিশে^র প্রায় ১৫০ দেশের প্রতিনিধি জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পথ নির্ধারণে যূথবদ্ধ হয়েছেন। বিশ্ব নেতারা এমন এক সময়ে এই সম্মেলনে যোগ দিলেন , যখন বিশ্ব জলবায়ু সংকটের চরম পর্যায়ের মুখোমুখি। আমাজন পৃথিবীর বৃহত্তম উষ্ণম-লীয় অরণ্য, যা প্রতি বছর বিলিয়ন টন কার্বন শোষণ ও দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে,জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে, এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিশ্বের সব দেশের প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, কূটনীতিক ও জলবায়ু আন্দোলনের কর্মীরা যখন এক ছাদের নিচে, তখনই জোরালোভাবে কিছু প্রশ্ন সামনে আসছে জলবায়ু সম্মেলনগুলো কি করপোরেটের আধিক্য ও পরস্পরবিরোধী হয়ে পড়ছে? বাস্তব অগ্রগতি আর সম্ভব হচ্ছে না?
সমালোচকরা বলছেন, জলবায়ু সম্মেলন এখন অনেকটা ‘বাণিজ্য মেলা’য় রূপ নিয়েছে। আবার করপোরেট কোম্পানির প্রভাবে মূল উদ্দেশ্যই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। গত দুই কপ আয়োজন করেছে তেলনির্ভর স্বৈরশাসিত দেশ, যেখানে সভাপতিও ছিলেন জ্বালানি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা। করপোরেট স্পন্সরশিপ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কপের স্পন্সর হচ্ছে দূষণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আজারবাইজানে বিগত কপে ছিলেন এক হাজার ৭৭০ জন জীবাশ্ম জ্বালানি-লবিস্ট। তাদের প্রভাবে কয়লা, তেল ও গ্যাসনির্ভরতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ভেস্তে যায়। ফলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার নেতৃত্বে দেশটি বন উজাড় রোধ ও পরিবেশ রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারে নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাজেই আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের কৌশলগত দায়িত্ব হলো গ্লোবাল সাউথকে একীভূত করে ন্যায়ের পক্ষে কণ্ঠ তোলা। আমাজনের ভাগ্য আসলে পৃথিবীর ভাগ্যই নির্ধারণ করবে আমরা কি পৃথিবীর ফুসফুস রক্ষা করব, নাকি উদাসীনতায় নিজেরাই এর গলা টিপে মারবো ?
প্রসঙ্গত: ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত “আর্থ সামিট”-এর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে জলবায়ু আলোচনার মূল কাঠামো গড়ে ওঠে। এরপর ১৯৯৫ সালে প্রথম কপ (ঈঙচ১) ম্মেলন জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয়। গত তিন দশকে কপ সম্মেলনগুলো বিভিন্ন মাইলফলক তৈরি করেছে যেমন ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রোটোকল, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি, এবং ২০২৩ সালের কপ২৮ দুবাই সম্মেলনের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের সূচনা।
প্রসঙ্গত: প্যারিস চুক্তি সইয়ের দশ বছর পরও বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য সময়ের আবর্তে ধীরে ধীরে অসম্ভব ও কঠিন হয়ে উঠছে। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো এখনো এ নিয়ে চরম বিভক্ত রয়েছে। একই ভাবে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। এর ফলে রেকর্ড উষ্ণতা, বন্যা,জলোচ্ছ্বাস,খরা,তীব্র গরম, ও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষ ও ধরিত্রীকে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু সংকট সৃষ্টি না করেও এর চরম প্রভাব ভোগ করছে। এমন পরিস্থিতিতে কপ৩০ সম্মেলন শুধু ন্যায্যতার নিবেদনই নয়, বরং এটি এক ধরনের পরীক্ষাও যে, বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থার কার্যকারিতা কতটুকু। কারণ বৈশি^ক উষ্ণতা হ্রাসে বিশ^ মোড়লদের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অনৈক্য,মতবিরোধ, অর্থনৈতিক ধীরগতি, করপোরেট আধিপত্য এবং শক্তিধর দেশের চাপে প্রত্যাশা আগের চেয়ে অনেক কম। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে কপ৩০ কি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে। নাকি আবারও প্রতিশ্রুতির ফানুস হয়ে চুপসে যাবে!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন দশকের পুরোনো এই সম্মেলন এখন অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে, যা বাস্তব পদক্ষেপ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাদের মত, সময় এসেছে পুরো প্রক্রিয়া পুনর্গঠনের। জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ দ্রুত ছাড়ের দাবি তুলছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল সম্পূর্ণ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সরাসরি এই তহবিল থেকে সহজে অর্থ পেতে পারে। অন্য অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত করা।
এমনি এক কঠিন বাস্তবতায় বৈশি^ক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায়বিচারে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তবে বিশ্বকে এখনই ন্যায্য অর্থায়ন ও অভিযোজন সহায়তা দিতে হবে। প্রতিশ্রুতির সময় শেষ, এখন দরকার বাস্তব পদক্ষেপ। প্যারিস চুক্তির এক দশক পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পায়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা কমছে, আর্থিক অঙ্গীকার ঝুলে আছে। বিশ্ব আজ এমন এক টানিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, হিমবাহ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, বন্যা, ঝড়, অগ্নিকান্ড সবকিছুই এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০২৫ সালের জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০) ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য“বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা”অর্থাৎ, আগের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়া এবং উন্নত দেশগুলোর আর্থিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়কাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম। দাবানল, তীব্র গরম, বন্যা, খরা ও ঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। আর্কটিক থেকে আমাজন পর্যন্ত প্রকৃতির নাজুক ভারসাম্য ভেঙে পড়ার উপক্রম। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, মানবজাতি যেন “নিজ গ্রহের সঙ্গে বিমাতা সুলভ আচরণ করছে। কারণ বিশ^কে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমার উষ্ণতা রোধে ব্যর্থতা আমাদের সকলের “নৈতিক ব্যর্থতা ও প্রাণঘাতী অবহেলা”।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, বর্তমান নিঃসরণ প্রবণতা যে বিশ্ব ২.৩ ডিগ্রি বা তার বেশি উষ্ণতার দিকে এগোচ্ছে যা নিরাপদ সীমার অনেক ঊর্ধ্বে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নি¤œভূমি দেশগুলোর বিলুপ্তি, জীববৈচিত্র্যের অপুরনীয় ক্ষতি, বিশাল জনগোষ্ঠীর বাস্তুচ্যুতি এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশংকা রয়েছে। বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসছে, তখন কয়লা, তেল ও গ্যাস শিল্পনির্ভর লাখো শ্রমিক ও সমাজকে পিছনে ফেলে রাখা চলবে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পদক্ষেপকে দারিদ্র্য হ্রাস ও টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তাই কপ৩০-এ প্রতিটি সিদ্ধান্তে ন্যায় ও সমতা থাকতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের মাত্র ০.৫% এরও কম হলেও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি। সরকারি হিসাবে, বাংলাদেশকে প্রতিবছর অভিযোজন কার্যক্রমে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু বাস্তবে পায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম যা বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতির নির্মম বৈষম্যের বহি:প্রকাশ। তবুও বাংলাদেশ তার সক্ষমতা, নিজস্ব অর্থায়ন, উদ্ভাবন ও পরিকল্পনা নিয়ে ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশে^ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান ২০২৩- ২০৫০, ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন ( এনডিসি), দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, উপকূলীয় বনায়নায়নের উদ্যোগে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অভিযোজন নেতৃত্বের প্রতীক।
কপ ৩০-এ বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর কেবল নিজ দেশের স্বার্থ নয়, বরং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মিলিত দাবি ন্যায্যতা, অর্থায়ন ও ন্যায়ভিত্তিক রূপান্তর। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লস এন্ড ডেমেজ ফান্ড কে দুর্বল দেশগুলোর জন্য বিজয় বলা হয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতা ও অর্থের ঘাটতি এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের দাবি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও জনগণের জন্য সরাসরি অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন,তা ঋণ নয়। বর্তমান ৩০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য বাড়িয়ে অন্তত অর্ধেক অর্থ অভিযোজন খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ অভিযোজনই জীবিকা রক্ষা করে, অর্থনীতি টিকিয়ে রাখে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখে। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, লবণসহিষ্ণু ফসল, উপকূলীয় বাঁধ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এসবই জীবনের সঙ্গে জড়িত।
সম্মেলনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করবে অন্তর্ভুক্তির ওপর। কারণ জলবায়ু ন্যায়বিচার মানে শুধু তাপমাত্রা নয়, মানব মর্যাদার প্রশ্নও। বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধি দল কপ ৩০-এ নি¤œলিখিত কৌশল গ্রহণ করবে জোট গঠন: ব্রাজিল,জি ৭৭+চায়না ও এলডিসি গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় করা। অর্থায়ন দাবি: বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার অন্তত ৫০% অভিযোজন খাতে। লস এন্ড ডেমেজ ফান্ডের সরাসরি সুবিধা গ্রহণ এবং শর্তহীন তহবিল প্রাপ্তির দাবি। জাস্ট ট্রানজিশন এজেন্ডা: সামাজিক সুরক্ষা, লিঙ্গসমতা ও কর্মসংস্থান যুক্ত রূপান্তর পরিকল্পনা। একই সঙ্গে কার্বন মার্কেট অংশগ্রহণ: ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে আটিকেল ৬ অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ , তবে অর্থায়নের বিকল্প নয়, পরিপূরক হিসেবে। এই কৌশল বাংলাদেশের অবস্থানকে “ক্ষতিগ্রস্ত দেশ” থেকে “সক্রিয় নেতৃত্বের দেশ”-এ রূপান্তর করেছে।
অন্যদিকে,বহু শক্তিশালী শিল্প উন্নত দেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে বাধা দিচ্ছে। বরং তারা “ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, কাগুজে সমাধা যেমন কার্বন ক্যাপচার, ব্লু হাইড্রোজেন, ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্রচার করছে, যা প্রকৃত নিঃসরণ হ্রাস করে না। তাছাড়া যে অর্থ প্রতিশ্রুত হয়, তা প্রায়ই প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে যায় কঠোর শর্তে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাই সরাসরি অর্থপ্রাপ্তির দাবি জানাচ্ছে। বিশ্বকে এখন জলবায়ু অর্থায়ন, প্রযুক্তি ও জ্ঞানকে গ্লোবাল পাবলিক গুডস হিসেবে দেখতে হবে বিশেষ অধিকার নয়, মানবাধিকারের অংশ হিসেবে। কপ ৩০ কেবল নীতি আলোচনা নয়, এটি মানবতার নৈতিক সাহসের পরীক্ষা। উষ্ণতার প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ মানে আরও বন্যা বাংলাদেশে,আরও খরা আফ্রিকায়, আরও অগ্নিকান্ড আমাজনে, আরও বাস্তুচ্যুতি পৃথিবীব্যাপী। বাংলাদেশের জন্য এই পরিণতি অস্তিত্বের প্রশ্ন। জলোচ্ছ্বাস কেবল জমি নয়, শতাব্দীর সংস্কৃতিও মুছে দিতে পারে। বিশ্বের জন্য ব্যর্থতা মানে ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাহলে কপ ৩০ আবারও বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে, মানবতাকে টেকসই ভবিষ্যতের পথে ফিরিয়ে নিতে পারে। যদি এসব বিষয়ে ঐক্যমত্যে উপনীত হতে পারে বিশ^ নের্তৃবৃন্দ তা হলে এর ফলাফল যুগ যুগ ধরে প্রতিধ্বনিত হবে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য, পৃথিবীর জন্য, এবং জীবনের নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরনে। আর ‘যদি কপ-৩০ বাস্তব ফলাফল দিতে ব্যর্থ হয়, এটি শুধু কূটনৈতিক ব্যর্থতা হবে না এটি হবে মানবতার ব্যর্থতা।
লেখক: মোতাহার হোসেন
সম্পাদক-ক্লাইমেট জার্নাল২৪. কম এবং সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম ( বিসিসিজেএফ)