সোমবার ১৩ অক্টোবর ২০২৫
সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ১০ কোটি মানুষ সক্রিয়
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বিস্ময়কর হারে বেড়েছে
বার্ষিক উৎপাদনশীলতা ক্ষতি ১২ বিলিয়ন ডলার
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ৭:৩৯ পিএম
বাংলাদেশে ডিজিটাল যুগের বিকাশে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বিস্ময়কর হারে বেড়েছে। বর্তমানে দেশে ১২ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, যার মধ্যে ৬৯ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী। এছাড়াও ইউটিউব, টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম রিলসসহ বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে কোটি কোটি মানুষ সক্রিয়। এই পরিবর্তন যেমন যোগাযোগ ও ব্যবসায় সহজতা এনেছে, তেমনি সামাজিক ভারসাম্য, মানসিক স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনীতির ওপর ফেলেছে নেতিবাচক প্রভাব। 

এই প্রতিবেদনে আমরা বিশ্লেষণ করেছি এই ডিজিটাল সময়ের প্রকৃত মূল্য কত এবং কীভাবে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

বাংলাদেশে আনুমানিক ১০ কোটি সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রতিদিন গড়ে ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে। যদি প্রতি ঘণ্টার আনুমানিক অর্থনৈতিক মূল্য $০.১২ ধরা হয়, তাহলে দেশের বার্ষিক উৎপাদনশীলতা ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিশাল ক্ষতি শুধুমাত্র সময়ের নয়, এটি সরাসরি দেশের অর্থনীতি ও শ্রম বাজারকে প্রভাবিত করে। 

সোশ্যাল মিডিয়ার লাইকের পেছনে ছুটতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটছে। চলতি বছরের এপ্রিল আখাউড়ায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে ভিডিও তুলতে গিয়ে দুই তরুণের মৃত্যু।

আগস্টে গাজীপুরের শাপলা বিলে নৌকা ডুবে দুই কিশোরের মৃত্যু, টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে। সুনামগঞ্জে ভিডিও নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৫০+ আহত। লালমনিরহাটে স্টান্ট ভিডিও করতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত। রাজবাড়ীতে ট্রেনে কাটা পড়ে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ভিডিও বানানোর সময়। এমনকি এর প্রভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক কলহও বাড়ছে। তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা, আত্মসম্মানহীনতা বেড়েছে অনলাইন তুলনা ও ‘ভিউ, ‘লাইক’ এর চাপ থেকে। বিবাহবিচ্ছেদ ও দাম্পত্য কলহ বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি ও পরকীয়া সম্পর্কের কারণে। সাইবারবুলিং, অনলাইন হয়রানি ও পর্নোগ্রাফি তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্থিতি নষ্ট করছে। 

বিশ্ব টেক কোম্পানিগুলোর সম্ভাব্য বাজারমূল্য ক্ষতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যদি বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বাজারমূল্যে কতটা প্রভাব পড়তে পারে? তার একটি বর্ণনা দেওয়া হলো। 

মেটার কোম্পানি বাজারমূল্য ১.৮ ট্রিলিয়ন বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারী বাজারমূল্য ৩ বিলিয়ন ৬০০ ডলার বাংলাদেশের ব্যবহারকারী ৬৯ মিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ক্ষতি ৪১.৪ বিলিয়ন ডলার। 

গুগলের (ইউটিউব) কোম্পানি বাজারমূল্য ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারী বাজারমূল্য ২ বিলিয়ন ৭৫০ ডলার, বাংলাদেশের ব্যবহারকারী ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং সম্ভাব্য বাজারমূল্য ক্ষতি  ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার। বাইটড্যান্সের (টিকটক) কোম্পানি বাজারমূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারী বাজারমূল্য ১ বিলিয়ন ৩০০ ডলার, বাংলাদেশের ব্যবহারকারী ৪০ মিলিয়ন ডলার এবং সম্ভাব্য বাজারমূল্য ক্ষতি ১২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মোট সম্ভাব্য বাজারমূল্য ক্ষতি প্রায় $৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 
বাংলাদেশে এখনো কোনো ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স চালু নেই। অথচ অনেক দেশ ইতোমধ্যেই এই খাতে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব সংগ্রহ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারত ৪০০ মিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ৮৩০ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ৪৫০ মিলিয়ন, ইতালি ২১৫ মিলিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ১৮০ মিলিয়ন এবং স্পেন ১৬৫ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করছে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নাই বললেই চলে। 

শুধু রাজস্ব আহরণ নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার উপর চীন, রাশিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণ নীতি রয়েছে। এর মধ্যে চীনে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ অধিকাংশ বিদেশি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ। রাশিয়ায় অনেক বিদেশি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম সীমিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতও সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর জন্য কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করেছে, যেমন ডেটা সংরক্ষণ, কনটেন্ট ফিল্টারিং এবং দেশীয় প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক।  কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কিছুই নেই। 

এ কারণে আমাদের দেশে চীন, ভারত ও রাশিয়ার মতো কিছু নীতি  প্রণয়ন করার দাবি উঠেছে। এ ব্যাপারে দেশের নীতি-নির্ধারকরা কিছু সুপারিশের কথা বলেছেন। যেমন- ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স চালু করে বিদেশি প্রযুক্তি কোম্পানি থেকে রাজস্ব আহরণ করা, ঝুঁকিপূর্ণ কনটেন্ট তৈরির বিরুদ্ধে আইন ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়ন করা, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা ও প্রচার করা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র ও হেল্পলাইন বিস্তৃত করা, সাইবার অপরাধ, হয়রানি ও ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দায়িত্বশীল অনলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করা ও তদারকি করা। 

সবশেষে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু এর অপব্যবহার জাতীয়ভাবে মূল্যবান সময়, অর্থ ও জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এখনই সময় সুস্পষ্ট নীতি, সচেতনতা এবং কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের। তাহলেই ডিজিটাল প্রযুক্তি হবে উন্নয়নের শক্তি, ধ্বংসের নয়।

আজকালের খবর/ওআর










http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে ‌‘কারাগার ঘোষণা’
ডিমলায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত
ডিমলায় ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সবজি বীজ বিতরণ
রাজারহাটে রিপোর্ট নাউ বিডি ওয়েব সাইট নিয়ে লাইট হাউজের অ্যাডভোকেসি সভা
মুক্তিযোদ্ধার মোবাইলফোন চুরি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পুলিশের বাধার মুখে প্রেস ক্লাব ছেড়ে শহীদ মিনারে শিক্ষকরা
৫৮ পাকিস্তানি সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের
সুযোগ থাকলে আমিই প্রথম টাইফয়েডের টিকা নিতাম: উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন
‘নতুন কুঁড়ি’র বিভাগীয় পর্যায়ে উর্ত্তিন হলো গৌরনদীর প্রিয়ন্তী পোদ্দার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft