
ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলা উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি নৌযানে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে চার জন নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, নৌকাটি মাদক বহন করছিল এবং হামলাটি তার নির্দেশেই পরিচালিত হয়।
শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে (আগে যার নাম ছিল টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢেউয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলা একটি ছোট নৌকা হঠাৎ বিমান হামলায় আগুনে পুড়ে যায়।
পিট হেগসেথের দাবি, নিহত চার জন মাদক সন্ত্রাসী ছিলেন। আমাদের জনগণকে বিষ খাওয়াতে তারা এসব মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছিলেন।
এর আগেও সাগরে তিনটি বিমান হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে প্রথম হামলায় ১১ জন নিহত হন। এরপর ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বরের হামলায় নিহত হন আরও ছয়জন।
প্রতিটি হামলার পরই ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, নৌকাগুলো মাদক বহন করছিল। তবে এখন পর্যন্ত এ–সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি, নিহতদের পরিচয়ও জানা যায়নি।
হেগসেথ তার পোস্টে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে যে নৌকাটি ‘পরিচিত মাদকপাচার রুটে’ চলছিল।
যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওপর আক্রমণ বন্ধ হয়, ততক্ষণ এই ধরনের হামলা চলবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নিজের ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, নৌকাটিতে ২৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষকে হত্যার মতো পরিমাণ মাদক ছিল।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে এভাবে টার্গেট হত্যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।
জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্র কেবল ‘সশস্ত্র আক্রমণের’ জবাবে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। মাদক পাচার সেই শ্রেণিতে পড়ে না।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন মাদক পাচারকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণ’ হিসেবে দেখাতে চাইছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, এসব হামলা প্রেসিডেন্টের ‘সেনাপতি হিসেবে সাংবিধানিক কর্তৃত্বের’ মধ্যে পড়ে। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় প্রেসিডেন্ট নিজেই এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।’
মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, প্রশাসন কংগ্রেসে একটি গোপন নথি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন মাদকচক্রগুলোর সঙ্গে ‘অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে’ যুক্ত, এবং এসব গোষ্ঠীকে ‘অবৈধ যোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু এই হামলাগুলোর বিষয়ে কংগ্রেস কোনো অনুমোদন দেয়নি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক লাতিন আমেরিকান মাদকচক্রকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রেন দে আরাগুয়া নামের একটি ভেনেজুয়েলান গোষ্ঠী। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এটি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নির্দেশে পরিচালিত। তবে মে মাসে প্রকাশিত এক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই দাবির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এসব হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়েছে। মাদুরো সরকার উপকূলে সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র পুয়ের্তো রিকোসহ কয়েকটি ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। খবর আল জাজিরার।
আজকালের খবর/বিএস