প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ এএম

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মনজুরুল হক নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে পুলিশে চাকুরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিনের বিরুদ্ধে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুরুল হক মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বাসিন্দা। জানা যায়, অভিযুক্ত সম্রাট হাসান তুহিন সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। এ ঘটনায় কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। হোসনা বেগম নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা হিলোচিয়া গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। অভিযোগ বিবরণীতে উল্লেখ, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে সম্রাট হাসান তুহিনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের দুই বছর পর ২০১৪ সালে তুহিন পুলিশের কনস্টবেল পদে চাকুরিতে যোগদান করেন। চাকুরিতে যোগদানের সময় তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুরুল হককে (মুক্তিযোদ্ধা সনদ নম্বর- ম ৬২১৮৬) নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে সুনামগঞ্জ নোটারী পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে সম্রাট হাসান তুহিন নিজেকে মনজুরুল হকের মেয়ের পুত্র (দৌহিত্র) হিসেবে দাবি করেন। পরে সেই হলফনামা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটা সুবিধা গ্রহণ করে পুলিশে চাকুরি নেন সম্রাট হাসান তুহিন। তিনি দীর্ঘদিন নেত্রকোনা জেলার মদন থানায় কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকুরির সুবাদে তিনি বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেপরোয়া জীবন-যাপন করতেন।
এমনকি ছুটি না নিয়েও তিনি মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন। জুলাই বিপ্লবের সময় মদনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলায় সরাসরি জড়িত থাকায় তুহিনকে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় বদলি করেন। বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কর্মরত আছেন। হলফনামাসহ এ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও তুহিনের ছবি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুরুল হককে দেখানো হলে তিনি বলেন, সম্রাট হাসান তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। এমনকি হলফনামায় থাকা স্বাক্ষরটিও আমার নয়; কেউ হয়তো প্রতারণা করেছে। আমার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি মোহনগঞ্জ উপজেলায়। সুনামগঞ্জে আমার মেয়েকে বিয়ে দেইনি। যে এই প্রতারণা করেছে তার শাস্তি দাবি করেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন (বিপি ৯৪১৪১৭১২০৯) জলার মদন থানায় কর্মরত থাকাকালীন ২০২৩ সালের ৫ জুলাই হতে ১৫৬ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের জেলার ফুলবাড়ীয়া থানার সিআর ৭২৯/২৩ নম্বর মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তুহিন। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তুহিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ময়মনসিংহ মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারপরও তিনি বহাল তবিয়তে চাকুরিতে কর্মরত আছেন। অভিযোগকারী হোসনা বেগম জানান, তুহিন প্রতারণা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুরুল হকের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে নিজেকে নাতি পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকুরি গ্রহণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক তার নানা হন না। অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক ঝগড়া হওয়ার কারণে এমন অভিযোগ করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক আমার নানা এটাই সত্যি। তার সনদেই পুলিশেই চাকুরি নিয়েছি। অফিসিয়ালি নিয়মিত আমাদের যাচাই-বাছাই হয়।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে থাকলে এতদিনে চাকুরি থাকার কথা নয়। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনজুরুল হক বলেছেন, আপনি তার নাতি নন এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন।
আজকালের খবর/ এমকে