প্রকাশ: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৪২ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন শেষ। আজ রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলো। অন্যদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। বলা যায়, নির্বাচনী ট্রেনে চড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ক্যাম্পাসভিত্তিক এসব নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। কারা জয়ী হচ্ছেন, কেন হচ্ছেন, প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচয়, দলীয় প্রভাব, নিবাচর্নী ব্যবস্থাপনা তো বটেই আলোচনায় থাকছে এসব নির্বাচনের প্রভাব কতটা পড়বে জাতীয় নির্বাচনে তা নিয়েও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম। ছাত্রশিবিরের এই নেতা ভোট পান ১৪ হাজার ৪২টি। ডাকসুর ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাই জয়ী হন। তাছাড়া ১৩টি সদস্য পদের মধ্যে শিবিরের প্রার্থীরা ১১টিতেই জয় পান।
বলা চলে, ডাকসু নির্বাচনে এবার দাপট দেখিয়েছে ছাত্রশিবির।অন্যদিকে, নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে অবশেষে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফলাফল প্রকাশ করা হয় জাকসু নির্বাচনের।৮ ঘণ্টায় ১২ হাজার ভোটারের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ভোট দেন এই নির্বাচনে, সেই ভোট গুনতে সময় লেগেছে ৪৮ ঘণ্টা। আর সব মিলিয়ে ফলাফল পেতে লাগে ৩ দিন। ৩৩ বছর পর আয়োজিত জাকসু নির্বাচনে এটাই প্রথম নজির।এই নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের আবদুর রশিদ জিতু। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম। জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট। বাকি চারটির মধ্যে দুটি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও দুটি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছে।দেশের বড় দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের দাপুটে জয় নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ভাবনায় ফেলে দিয়েছে রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্যদের। যেখানে ডাকসু আর জাকসুতে এর আগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনে ভালো ফলাফল করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলোর প্রায় বেশিরভাগ ভোটই পড়েছে ছাত্রশিবিরের ঝুলিতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রশিবিরের আচার-আচরণ, ভালো ব্যবহার, সহযোগিতার মনোভাব, নারী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে হয়রানি না করা এসব বিষয়ও বিবেচনায় ছিল ভোটারদের। অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের হারের পেছনে কাজ করেছে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বা বিভিন্ন ধরনের ওঠা অভিযোগ। যেখানে উল্টো দিকে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক দক্ষতা, সহযোগিতার মনোভাব, যোগাযোগের কৌশল তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের বিবেচনায় প্রাধান্য পেয়েছে।একই অবস্থা জাকসু নির্বাচনের ফলাফলে। ভিপি ছাড়া সবকটি পদেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয়জয়কার। জামায়াতে ইসলামীর এ সহযোগী ধর্মভিত্তিক সংগঠন ছাত্রশিবির ছাত্রদের মন জয় করলো কেমন করে এমন প্রশ্ন অনেকের।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলছেন, কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ‘কণ্ঠস্বর’ তুলে ধরতে পারবেন, সে বিবেচনা মাথায় রেখেছেন তারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকার কথাও তাদের মনে আছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলো আজ। আগামী মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রার্থীরা এ মনোনয়নপত্র নিতে পারবেন প্রার্থীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। চাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নতুন করে ১ হাজার ৭৬৮ শিক্ষার্থী যুক্ত হচ্ছে এবার। এ হিসাবে বর্তমানে চাকসুতে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৬৩৪ জন। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১২ অক্টোবর।
অপরদিকে, রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। ছাত্রশিবির এরইমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করেছে সেখানে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকটা নিরবে থেকেই সংগঠনের কার্যক্রম চালান ছাত্রশিবিরের নেতারা। ৫ আগস্টের পর রাজনীতির মাঠে কৌশল বদলে অনেকটা প্রকাশ্যে আসা শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবির। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না ছাত্রদল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকসু-জাকসুর মতো রাকসু ও চাকসুর ভোটেও সমীকরণ বদলে দিতে পারে ছাত্রশিবির।
আজকালের খবর/ এমকে