রবিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আবিদের বক্তব্য নিয়ে শিবির কর্মীর মকারি ও সমালোচনা, ক্ষমা চেয়ে স্টাটাস
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৫:৩২ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু)-এর ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই বিপ্লবের এক উক্তি নিয়ে মকারি ভিডিও তৈরির ঘটনা ঘটেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে ২৬ সেকেন্ডের ভিডিও ১৪ সেকেন্ড কাটছাঁট করে ভাইরাল করেছে বলে দাবি জড়িতদের। 

ভিডিওতে দেখা যায়, আট জন শিক্ষার্থী একসাথে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বে শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ বিজয় অর্জনের আশ্বাসে বিজয় উল্লাস হিসেবে ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তিকে ব্যাঙ্গাত্বকভাবে উপস্থাপন করেন। তবে ঐ শিক্ষার্থীদের দাবি ভিডিওটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাঁটছাট করে প্রচার করা হয়েছে। তবে ভিডিওতে থাকা আট শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মী বলে জানা গেছে।

এ নিয়ে ফেসবুকে ঢাবি ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান লেখেন, ‘পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।’

জুলাইয়ের কথা নামক এক পেইজে প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেন, ‘জুলাইয়ের অনবদ্য দলিল ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খানের এ কথা। যারা এ নিয়ে মকারি করেছে, তারা জুলাইকে খাটো করেছে। ঘৃণা ও নিন্দা জানাচ্ছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘কথাটাতে ভুল কই? আবিদুল ইসলাম খান জুলাইয়ের উত্তাল সময়ে ৫ আগস্টে গুলিবর্ষণের মধ্যে বলেছিলেন ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাবেন না’। কিন্তু আমরা কেউ একসাথে থাকতে পারিনি। সবাই বিভক্ত হয়ে গেছে। গুজব, হিংসা, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। তাই বলে কি অভ্যুত্থান মিথ্যা হয়ে যায়? ঐক্যের বাণী মিথ্যা হয়ে যায়? এটাই প্রশ্ন রেখে যাব আপনাদের কাছে।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদী লেখেন, ‘এইসব স্টুপিডিটি বন্ধ করতে হবে। আবিদের রাজনীতি আপনার পছন্দ না হতে পারে। কিন্তু, সে জুলাইয়ের নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। তার বক্তব্যটা জুলাইয়ের অনবদ্য দলিল।’

ছাত্রদল নেতা শেখ তানভীর বারী হামিম লেখেন, ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যেয়েন না’ বাংলা ব‍্যাকরণে একটি অনুরোধসূচক বাক্য কিন্তু, এর প্রভাব আন্দোলের সেই মুহুর্তে ছিলো অসীম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো- ‘বহু মানুষের রক্ত, অনেক পরিবারের অশ্রু ও আত্মত‍্যাগের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কোনো মুহুর্তকে নিয়ে ব‍্যঙ্গ করবেন না। এটা জাতি হিসেবে অত‍্যন্ত লজ্জার। মনে রাখবেন ব‍্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকে দেশ!’

এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করে লেখেন, কাদের ভাই যেভাবে জুলাইকে (৯ দফার ঘোষক বলে) বিক্রি করে ভোট বাড়াতে চেয়েছে। তেমনি আবিদ ভাইও জুলাইয়ে বলা টার্মকে ব্যবহার করে ভোট কাস্ট করতে চাইছে। সাক্ষাতকার, প্রচারণা, টকশো সর্বত্র নিজেকে নিজেই হিরো হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কার কি অবদান সেটা তো সবাই জানে। সবার অবদানের প্রতিই জুলাইয়ের যোদ্ধারা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু, অবদানকে পুঁজি করে কিছু করাকে মানুষ এখন ৭১ এর চেতনাকে বিক্রির সাথেই তুলনা করে। এবার সেটা যেই করুক না কেন! সেটাকে স্যাটায়ার করেই হয়তো ভিডিওটা বানিয়েছে। তবে এটা কাট ভিডিও, শুরুর অংশে সাদিক কায়েম পাকিস্তানি বলা বামদের শ্লোগানকে আনা হয়েছিল। তবুও এমন ভিডিও না বানালেই ভালো হতো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জড়িত এক শিবিরকর্মী জানান, ভিডিওটা তো আংশিক কেটে দিয়েছে। সেখানে মেঘ মল্লার বসুকে ব্যঙ্গ করে ‘তুমিও জানো আমিও জানি, সাদিক কাইয়ুম পাকিস্তানি’ স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জুলাই সংশ্লিষ্ট আবিদ ভাইয়ের অবদানকে কটাক্ষ করার চিন্তা থেকে এই ভিডিও তৈরি করিনি। মূলত নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি যে ভঙ্গিতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ওই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। জুলাইয়ে কারো অবদানকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তবুও এই ভিডিও দেখে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

এদিকে জড়িত শিবির কর্মী ওমর ফারুক ফেসবুকে এক স্টাটাসের মাধ্যমে ভিডিওটার ব্যাখ্যা দিলেন। ক্ষমা চেয়ে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৯ সেপ্টেম্বর  ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবিদুল ইসলাম খান ভাইকে নিয়ে একটি কাটপিস ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে। ভিডিওটিতে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ভাইয়ের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ অংশটুকুকে আলাদা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসলে ভিডিওটি হয়েছিলো হলের একটি রুমে বসে সহপাঠীদের মাঝে আড্ডার ছলে, কোনো রাজনৈতিক বৈঠক বা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা হিসেবে নয়। এতে আবিদ ভাইয়ের কথার পাশাপাশি অন্য ব্যক্তিকেও নিয়ে মন্তব্য ছিল। কিন্তু, ভিডিওটির একটি অংশ কেটে ছড়িয়ে দিয়ে আবিদ ভাইয়ের প্রসঙ্গকে বিশেষভাবে সামনে এনে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিওর অংশ বিশেষ কেটে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা তৈরি করার অপচেষ্টা করছেন, তারা নিতান্তই আমার ওপর অবিচার করছেন। 

জুলাই আন্দোলনে আবিদ ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তার হৃদয়গ্রাহী আহ্বান— ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’— সেই কঠিন মুহূর্তে অসংখ্য শিক্ষার্থীর মনোবল ধরে রেখেছিলো, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো। আমরাও আন্দোলনের মাঠে তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনোই আবিদ ভাইকে অসম্মান করে কোনো মন্তব্য বা পোস্ট করিনি এবং ভবিষ্যতেও করবো না। মজার ছলে তৈরি হওয়া একটি ভিডিওর অপব্যবহার করে যারা ভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরি করছে, প্রকৃতপক্ষে তারাই আবিদ ভাইকে মানুষের কাছে হাস্যকর করার চেষ্টা করছে।

আমাদের এই আড্ডার ভিডিওটি এভাবে বিকৃত হয়ে মানুষের মনে কষ্ট দেবে— বিশেষত জুলাইয়ের সহযোদ্ধাদের— এটি আমরা কোনোভাবেই ভাবিনি। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মানুষের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা না ছড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তাই এমডি. আবিদুল ইসলাম খান ভাইসহ যারা এই ঘটনায় ব্যথিত হয়েছেন, তাদের কাছে আন্তরিকভাবে আমরা অনুরোধ করছি, ঘটনাটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মানুষের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা না ছড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, কয়েকজন বন্ধুরা মিলে মজার ছলে ভিডিও করে ফেসবুক দিয়েছেন। অথচ, একই ভিডিওতে সাদিক কায়েমকে নিয়েও ট্রল করেছেন। ইস্যু ক্রিয়েট করার জন্য একটা মহল কাটছাঁট করে ভিডিও ছড়িয়ে ভাইরাল করেছে। ভিডিওতে থাকা কয়েকজন আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরে পুলিশের মার খেয়েছে। তবে তাদেরকে আন্দোলন বিরোধী হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করা হচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছে এবং আবিদ ভাইয়ের কাছে ক্ষমার জন্য যোগাযোগ করছে। তারপরও তাদেরকে সাংগঠনিকভাবে ডাকা হচ্ছে, যথাযথ ব্যবস্থা নিব।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পূর্ব মুহূর্তে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের নেতা আবিদুল ইসলাম খান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্লিজ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না।’ তার এ আহ্বান আন্দোলনকারীদের শক্তি, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনে ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ উক্তির জনক বলে প্রচার-প্রচারণা করেন তিনি।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
শ্রীলঙ্কার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে গেলো বাংলাদেশ
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে : আলী রীয়াজ
দুর্গাপূজায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ১২ দিন ছুটি
ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৪
সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ইবি সাংবাদিক আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দু’টি শাস্তির সিদ্ধান্ত
এসএইচকেএসসি শিক্ষার্থীদের ‘হ্যাপি ওরিয়েন্টেশন’ অনুষ্ঠিত
গাজীপুরে সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করলো সিল্কেন সুইং লিমিটেড
দেবীদ্বারে র‍্যালি ও জশনে জুলুস করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
সাত মাসে হামলার শিকার ৩৬৮ পুলিশ সদস্য
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft