প্রকাশ: বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ৮:০৩ পিএম

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি। হাস্যকৌতুকে আজও তার জুড়ি মেলা ভার। বাংলা চলচ্চিত্রের এক ইতিহাসের নাম ভানু বন্দোপধ্যায়। কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় এই অভিনেতার জন্মস্থান তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের লৌহজং-এ। তাই আজও তাকে “ঢাকার ভানু” হিসেবেই চেনে সারা ভারতের সিনেমাপ্রেমীরা। শুধু কমেডি নয় যে কোন চরিত্রেই ভানু বন্দোপধ্যায়ের অভিনয় লাখো লাখো দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে।
১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা লৌহজংয়ে কাটলেও পরবর্তীতে শিক্ষাকাল কেটেছে ঢাকায়। ঢাকার, পোগজ, সেন্ট গ্রেগরি’স হাই স্কুল এবং জগন্নাথ কলেজে শিক্ষা শেষ করে ১৯৪১ সালে কলকাতায় চলে যান ভানু। চলে যান বলতে বাধ্য হন বিপ্লবীদের (বিপ্লবী দীনেশ সেন দ্বারা প্রভাবিত) সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। সেখানে তিনি আয়রন অ্যান্ড স্টীল কম্পানি নামে একটি সরকারি অফিসে যোগ দেন এবং বালীগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে তার বোনের কাছে দু’বছর থাকার পর টালিগঞ্জের চারু অ্যাভিনিউতে বসবাস শুরু করেন।
সেখানে ১৯৪৩ সালে অডিওতে ঢাকার ভাষায় কৌতুক দিয়ে যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৪৬ সালে অভিযোগ সিনেমার মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছর জাগরন নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৫২ সালে বসু পরিবার (১৯৫২) যেখানে তিনি একজন বাঙালি ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তবে ভানু বন্দোপধ্যায়ের খ্যাতি এনে দেয় ১৯৫৩ সালে সাড়ে চুয়াত্তুর সিনেমাটি। এই সিনেমায় কেদার চরিত্রে ঢাকারা ভাষায় দেওয়া সংলাপ “মাসিমা, মালপোয়া খামু” আজও মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
এর পর একে একে খ্যতনামা নির্মাতাদের সিনেমায় কাজ করতে থাকেন ভানু বন্দোপধ্যায়। ৮০ তে আসিও না, পাশের বাড়ি, ভ্রান্তি ভিলাস, জমালয়ে জীবন্ত মানুষ, মৃতের মর্ত্যে আগমন, ভানু গোয়েন্দা জহর এ্যাসিস্টেন্ট, ভানু পেল লটারি, স্বর্গমর্ত্য, পারসনাল এ্যাসিস্টেন্ট, মিস প্রিয়ংবদাসহ তিন শতাধিক সিনেমা অভিনয় করেন।
১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আপামর বাঙালির প্রিয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজীবন যিনি বাঙালিকে হাসিয়েছেন, সেই তিনিই নিজের শেষযাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, ততদিন স্বমহিমায় বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভানু বন্দোপধ্যায় ঢাকা জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামী গোষ্ঠী অনুশীলন সমিতির সাথে যুক্ত ছিলেন। পুলিশ তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহ করায় কিশোর বয়সে তাকে ৩০ দিন গৃহবন্দী রাখা হয়েছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পর তিনি বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে যোগ দেন। পরবর্তীতে লেখক (পরবর্তীতে চলচ্চিত্র নির্মাতা) সলিল সেনের সাথে ক্রান্তি শিল্পী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন, কলকাতায় তাদের পক্ষে তহবিল সংগ্রহের জন্য পূর্ব বাংলার শরণার্থীদের উপর নির্মিত ঐতিহাসিক নাটক নতুন ইয়াহুদি (১৯৫১, চিত্রায়িত ১৯৫৩) মঞ্চস্থ করেন।
আজকালের খবর/আতে