ব্র্যাক আয়োজিত সংলাপে বিশিষ্টজনরা
সিএমএসই খাতে পাঁচ প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলার তাগিদ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫, ৬:২৫ পিএম
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্যোক্তা বিকাশ এবং জীবিকার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (Cottage, Micro and Small Enterprises-CMSE) খাত কক্সবাজারের স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ এবং দেশের প্রায় ১.২ কোটি লোক সরাসরি সিএমএসই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি দেশের শিল্পখাতের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান ঘটে এই খাত থেকে। 

তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি এ খাতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে- সীমিত অর্থায়নের সুযোগ, বাজার সংযোগে ঘাটতি, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব, জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং অবকাঠামোগত সংকট।

সোমবার (২৮শে জুলাই) কক্সবাজারের একটি স্থানীয় হোটেলে ‌‘কক্সবাজারে ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের  ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর ওমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার (আইএসইসি-ISEC) প্রকল্পের আওতায় এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিএমএসই খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় তুলে ধরাই ছিল এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান।

ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতাধীন আইএসইসি প্রজেক্টের লিড খন্দকার ফখরুল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি আইজেক প্রকল্পের আওতায় সিএমএসই খাত কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. মকবুল হোসেন বলেন, এই অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়া নিয়ে নানা সমস্যা ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেছেন। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার করতে চাই, ব্যাংক তখনই কাউকে ঋণ দিবে, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা উদ্যোক্তার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যবসায়ী যদি সব নিয়ম মেনে চলার পরও ঋণ না পান, তাহলে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আমরা আইনি প্রক্রিয়া ও বিদ্যমান নিয়ম অনুসরণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। এতে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সারা দেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৪টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কক্সবাজারে সিএমএসই খাতে বরাদ্ধকৃত ২৫ শতাংশ ঋণের মধ্যে আমরা মাত্র ১৩.৬৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছি। অবশিষ্ট অংশ বিতরণ করতে না পারার মূল কারণ- আমরা স্থানীয়ভাবে যথাযথ উদ্যোক্তা খুঁজে পাচ্ছি না।’  

অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের কক্সবাজারের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রাসেল বড়ুয়া বলেন, প্রথাগত ব্যবসার পরিবর্তে আমাদের ডিজিটাল বা অনলাইনভিত্তিকি নতুন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা ‘বিসিক অনলাইন মার্কেট’ চালু করেছি। তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দিয়ে ‘শিল্প উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচি চালু করেছে, যা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কক্সবাজারের প্রধান রুচিকা বেহেল, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ কক্সবাজার ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট জাহানারা ইসলাম, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবু মোরশেদ চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন বাহারী, ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান কাজী রওশন আরা, এই কর্মসূচির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেজাউল মজিদ এবং আইএসইসি প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট লিড মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। 

এছাড়া জাতিসংঘ, আইএলও, ব্র্যাক, অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীসহ সংলাপে ১৬৫ জনের অধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৯ লাখ কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসই) রয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) এর তথ্যমতে, কক্সবাজার জাতীয় জিডিপিতে ৪.৪ শতাংশ অবদান রেখেছিল। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কক্সবাজারে মাত্র ১৫ দিনে পর্যটন খাতে ১,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে, যা এই অঞ্চলে সিএমএসই খাতের বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।

সংলাপে অংশগ্রহণকারী বক্তারা সিএমএসই খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন। যেমন- কক্সবাজারসহ দেশব্যাপী এসএমই খাতে গুণগত উৎপাদন ও গবেষণা উৎসাহিত করা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি, এসএমই খাতের উপযোগী ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে জোর দেওয়া ইত্যাদি।

আইএসইসি (ISEC) প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায় বসবাসরত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর (হোস্ট কমিউনিটি) জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা-এর আর্থিক সহায়তায় ব্র‍্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ইউএনডিপি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। 

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্মটা এখন বৈষম্য সৃষ্টির প্লাটফর্ম
৫ আগস্টের আগেও জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে: মাহফুজ আলম
দেশে দুই মাসে নির্যাতনের শিকার ৪৩৮ নারী ও কন্যাশিশু
রোহিঙ্গা মুসলিমদের দমন-পীড়ন করছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
সাধারণ যাত্রীর মতো লন্ডনে বাসের অপেক্ষায় তারেক রহমান
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বরিশালের গৌরনদীতে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন যুবদল নেতা সরদার মোহাম্মদ
কাপাসিয়ায় শাপলা দেখতে গিয়ে নৌকাডুবে দুই বন্ধুর মৃত্যু
আওয়ামী ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কে এই মেজর সাদিক?
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ
টেকনাফে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ইয়াবা উদ্ধার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft