
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
রবিবার (১৩ জুলাই) অফিশিয়াল বিবৃতির মাধ্যমে শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাফত ছাত্র মজলিস ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ নিন্দা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং নূর-ই আলম, রবিউল আলম-সহ আরও কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। হামলায় আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরাও আহত হন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা পরে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক নারী শিক্ষার্থীকে ভিকটিম সাজিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালায়, যা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অংশ।
শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর এই নির্মম হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’
এদিকে হামলার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী শাখা ছাত্রদল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে নিন্দা জানান সংগঠনটি।
সংগঠনটি জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মর্মাহত। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব ও শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবি আদায়ের সকল কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদকর্মীরা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে আসছে। কিন্তু আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে হাতাহাতিতে জড়ায় বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়ররা। এসময় সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে বিভাগের শিক্ষার্থীদের দ্বারা লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় এবং এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সংবাদ কর্মীদের সহনশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা একে অপরের পরিপূরক।
এছাড়া আজ রবিবার সাংবাদিকদের কাজে বাধা প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ইবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ বিবৃতিতে ইবি ছাত্রশিবির সভাপতি মু. মাহমুদুল হাসান ও সেক্রেটারি ইউসুফ আলী বলেন, ‘খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে এবং একজন সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। শিক্ষাঙ্গণে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর আঘাত। আমরা অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।’
একই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জুনাইদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
একইভাবে এ ঘটনায় রবিবার (১৩ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক পঙ্কজ রায় সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি জানান, খেলায় সংঘটিত বিশৃঙ্খলার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত সংবাদকর্মীরা ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে গেলে অর্থনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী তাঁদের উপর হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং সাংবাদিকদের প্রতি সহিংস আচরণের প্রতিবাদ জানায়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকালের খবর/বিএস