ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলার হারালেন ইলন মাস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সাবেক উপদেষ্টা ইলন মাস্কের দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। একটি সরকারি বিলকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে। এরই মধ্যে তর্কেও জড়িয়েছেন দুজন। রাখঢাক না করেই ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, মাস্কের কার্যকলাপে খুবই হতাশ তিনি এবং ভবিষ্যতে বিশ্বের এই শীর্ষ ধনী ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে কি না— সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন।

এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইলন মাস্ক। মাত্র একদিনের ব্যবধানে তার ব্যক্তিগত মোট সম্পত্তি কমে গেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। 

শুক্রবার (৬ জুন) ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার ইনডেএক্সে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। খবর রয়টার্সের। 

মূলত, টেসলা ও স্পেস এক্সের শেয়ার দর কমে যাওয়াতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, তিনি এখনও বিশ্বের শীর্ষ ধনী রয়েছেন। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৩৩৪ বিলিয়ন ডলার।

সবশেষ বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ কমেছে, যার ফলে ইলন মাস্কের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটির বাজারমূল্য একদিনেই ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি নেমে গেছে।

তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট সেটের মতে, এটি টেসলার ইতিহাসে একদিনে বাজারমূল্যের সর্ববৃহৎ পতন। যা এখন পর্যন্ত যেকোনো কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় একদিনের বাজারমূল্য হারানোর রেকর্ড।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিস থেকে প্রকাশ্যে টেসলার সিইও ইলন মাস্কের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। এদিন জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রেডরিশ মের্জের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দেখুন, ইলনের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল; কিন্তু আমি জানি না ভবিষ্যতে তা থাকবে কি না। আমি তার ওপর খুবই হতাশ। কারণ যে বিলটি নিয়ে ইলন আলোচনা-সমালোচনা করছেন— এখানে বসে থাকা যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে তিনি এই বিলের কার্যকারিতা সম্পর্কে বেশি অবগত। এতে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কী কারণে সমস্যা হলো আমি বুঝতে পারছি না।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইলনের সঙ্গে তার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্প ব্যবহার করেন নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল ও মাস্ক ব্যবহার করেন এক্স।

এই দ্বন্দ্বের সূচনা কয়েকদিন আগেই, যখন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত করছাড় ও ব্যয় বিলের বিরোধিতা করেন ইলন মাস্ক। তিনি দাবি করেন, বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণকে ৩৬ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়াবে।

প্রথমদিকে ট্রাম্প চুপ থাকলেও বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইলনের আচরণে খুবই হতাশ। আমাদের সম্পর্কটা একসময় ভালো ছিল, এখন আর তেমনটা থাকবে কি না, জানি না।

ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত সরকারি চুক্তি বাতিলেরও হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে পাল্টা জবাবে ট্রাম্পকে অভিশংসনের আহ্বান জানিয়েছেন মাস্ক।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকে। ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণা সভায় তখন মাস্ককে নিয়মিত দেখা গেছে। এমনকি নির্বাচনের আগেই মাস্ক বলেছিলেন যে ক্ষমতায় গেলে নতুন প্রশাসনে মাস্ককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচনে জয়ের পর সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন ট্রাম্প। সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন সংক্রান্ত নতুন একটি দপ্তর খুলেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডজ নামের সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।

মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশি সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশের ভেতরেও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।

মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে।

গত মাসে কর হ্রাস সংক্রান্ত ‘জনকল্যাণমূলক’ বিলে অনুমোদন দেওয়ার পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল’ (ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট)। তার পরেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।

মাস্ক দাবি করেন, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরে থেকে এত দিন ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কমাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেসব ব্যর্থ হয়ে যাবে ওই একটি বিলের কারণে। বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসে পাশ করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছিলেন মাস্ক। এমনকি এই বিল আটকানোর জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জনগণকে মাঠে নামার আহ্বানও জানিয়েছেন মাস্ক।

আজকালের খবর/বিএস 








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ডাকসুতে স্বতন্ত্র প্যানেল দিচ্ছেন উমামা
৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা
পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন
উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধ, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে আইসিসিকে তদন্তের আহ্বান
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিশ্বনাথের সুমেল হত্যা মামলায় যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড
চট্টগ্রাম খুলশীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা, থানায় জিডি
গাজীপুর জেলায় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে
গাজীপুর সিটির হাড়িনাল এলাকায় সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে নগরবাসী
নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে ধরণী বাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft