মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫
কুন ফায়া কুন
কাজী খাদিজা আক্তার
প্রকাশ: রবিবার, ১ জুন, ২০২৫, ৮:৫১ পিএম
২০১২ সালে ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত ‘রকস্টার’ ছবির একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘কুন ফায়া কুন’ গানটি। ছবি থেকে ছবির গানটি আমাকে বিশেষভাবে মনোযোগী করেছিলো। একটানা কয়েকবার শুনতাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো পুরো গানের অর্থ বুঝলেও কুন ফায়া কুন-এর অর্থ তখন আমার কাছে ততোটা স্পষ্ট ছিলো না। হঠাৎ একদিন কথা প্রসঙ্গে প্রিয় সহকর্মীর উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলাম একটি প্রশ্ন, ‘আচ্ছা, কুন ফায়া কুন অর্থ কি?’ চট করেই উত্তর এলো, ‘হও, হয়ে যায়।’ একটু অবাকই হলাম সাথে বিস্ময়! এতো সুন্দর অর্থটা এতোদিন জানা হলো না। অথচ সূরা ইয়াসিনে কতোবার পড়েছি। ‘ইন্নামা আমরুহু ইযা আরাদা শাইয়্যান আইঁ ইয়াকূলা লাহু কুন ফায়াকুন।‘ এর অর্থ হলো, ‘হ্যা, এবং তিনিই যখন তিনি কোনো বিষয় ইচ্ছে করেন তখন ঐ সম্বন্ধে বলেন যে, হও, আর হয়ে যায়।’ আল্লাহর তার কর্তৃত্ব, শক্তি এবং মুহূর্তের মধ্যে যেকোনো কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে প্রকাশ করেছেন এই আয়াতে। কাওয়ালী আমার খুব প্রিয়, তাই এই কুন ফায়া কুন গানটির ভালোলাগায় আটকে গেলাম।

রকস্টার মূলত একজন আবেগপ্রবণ প্রেমিক এবং নেতিবাচক রকার জনার্ধন জাখরকে ঘিরে আবর্তিত হয় যার চরিত্রে রণবীর কাপুর অভিনয় করেন। কুন ফায়া কুন গানটি ছবিতে আবির্ভূত হয় যখন জনার্ধনকে তার বাড়ি থেকে বের করে দেয় কারণ তার বিরুদ্ধে তার বড় বোনের টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল, যদিও সেই অভিযোগ সত্য ছিলো না। এরপর সে একটি মসজিদে আশ্রয় নেয় যেখানে প্রায়শই জিকির এবং সেলাওয়েতের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হত। এই গানটি আমাদের ইসলামী সংস্কৃতিতে বিখ্যাত কাসিদা এবং জিকর গানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ গানটি আরবি শব্দগুচ্ছকে এর শিরোনাম হিসেবে ধার করেছে। তবে গানটি কাওয়ালি এবং সুফি গান হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই গানটির সুরকার এ আর রহমান গানের কাজ করতে গিয়ে ভয়ে ছিলেন, কারণ গানটি না আবার কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো এই গানের আবেদন সকলের কাছে পৌঁছে গেলো বেশ সহজ সরলভাবে এবং জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে। তা ছাড়া ‘কুন ফায়া কুন’ শব্দগুচ্ছটি যেন ছড়িয়ে গেলো সকলের মাঝে অন্য এক রূপে অন্য এক ভালোলাগায়।


গানটির প্রথম ইসলামী মূল্যবোধ হলো অনুতাপের। আল্লাহ কখনোই অনুতাপ করলে ক্ষমা চাইলে তার বান্দাকে প্রত্যাখান করেন না। এই গানের গভীর লাইন হলো, ‘আজ খালিপান মে পি কা ঘর তেরা। তেরা বিন খালি আজা খালি পান মে।’ এর অর্থ হলো, ‘এই শূন্যস্থানে প্রবেশ করো (তোমার প্রিয়জনের ঘরে) হৃদয়, তুমি ছাড়া এটা খালি। তুমি ছাড়া এই শূন্যতা বিদ্যমান ছিলো।’ যখন আমরা আল্লাহর কাছ থেকে দূরে থাকি বা তার উপস্থিতি টের পাই না তখন আমরা জীবনে আমাদের সময় চলার শূন্যতা অনুভব করবো, যেন কোথাও কোনোকিছু ভুল হচ্ছে। এই সময় আমাদের অনুতাপ করে তার কাছে ফিরে আসা উচিত। তার কাছেই ফিরে আসতে হয়।

আত্মার পরিশুদ্ধতা বা আত্মার পবিত্রতা এই গানের আরো একটি মূল্যবান দিক। গানের উদ্দেশ্য ছিলো মূলত আমাদের আত্মাকে সমস্ত অন্ধকার এবং নেতিবাচক ভাব থেকে পবিত্র করা যা আমাদের হৃদয়কে ক্ষতি করছে। আর যেন আমরা শান্ত স্থির হয়ে তার প্রতি আন্তরিকভাবে ইবাদত করার জন্য মনোনিবেশ করি। স্রষ্টার কাছে যেতে হলে তার অনুগ্রহ ভালোবাসা পেতে হলে আমাদের পবিত্র হতে হবে মনে এবং বাহিরে।

‘সজরা সাভেরা তেরা মন বারসে,বাজরা আন্ধেরা তেরি জলতিলো।’

এর অর্থ, প্রভাতের বৃষ্টি আমার শরীরে রহমত বর্ষণ করে। যদি সৃষ্টিকর্তা আমাদের জীবনে আশীর্বাদ করেন তবে কোনো কিছুও ভুল হওয়া উচিত নয়। এবং তার সামনে মন খোলে ইবাদত করার জন্য সম্পূর্ণ পবিত্র থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইসলামে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। এই গানে আমার  সবচেয়ে প্রিয় লাইন, ‘জব কাহি পে কুছ নেহি ভি নেহি থা, ওয়াহি থা ওয়াহি থা...।’

যখন কোথাও কোনোকিছু ছিলোনা (তখনো) সে ছিলো...সে ছিলো... এই যে বিশ্বাস!  কোথাও যখন কেউ ছিলো না তখন তুমি ছিলে হে আল্লাহ। 

‘ছাদাক আল্লাহু অলি উল আজিম’, সর্বশক্তিমান আল্লাহ সত্য বলেন। মানুষের মনে যে প্রশ্ন তার বোধ হওয়ার পরে জেগে উঠে তা হলো কোথায় এলাম, এই পৃথিবী কার সৃষ্টি? তার উত্তর ‘কুন ফায়া কুন’-এর মধ্যে নিহিত। এই আয়াত আল্লাহর শক্তিকে প্রকাশ করে। তিনিই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। যখন তিনি কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন, ‘হও, আর তা হয়ে যায়।‘ শব্দটি সবকিছুর উপর আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং সর্বোচ্চ কর্তৃত্বকে সংজ্ঞায়িত করে। আর তা প্রমাণ করার জন্য কোরআনে বিভিন্ন সূরায় আট বার ‘কুন ফায়া কুন’ আয়াতটি এসেছে। ‘কুন ফায়া কুন’ গীতিকার ইরশাদ কামিল এবং সুরকার এ আর রহমান। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এ আর রহমান, জাভেদ আলী এবং মুহিত চৌহান। গানটি এ আর রহমান নিজামুদ্দিন আউলিয়াকে উৎসর্গ করেছেন। এই গানটির জনপ্রিয়তা এখনো বিদ্যমান। কোনো কোনো গান মহাকালের গহবরে হারিয়ে যায় না, বরং যুগ থেকে যুগান্তরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভালোলাগার গভীরতায় গহীনে জায়গা করে নেয় আর, ‘কুন ফায়া কুন’ এমনই একটি গান।

কাজী খাদিজা আক্তার: শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী। 

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
বিচিত্রায় ৪৭ বছর আগের জয়া ভাদুড়ীর সাক্ষাৎকার
প্রশংসা কুড়াচ্ছে জয়ের ‘ধোকা’
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহত প্রায় ৪৫০ জন
ইরানে ডাক্তার-নার্সদের ছুটি বাতিল
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে মোসাদের অভিযান পরিকল্পনা কেন্দ্র চুরমার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
টেকনাফে বাস থামিয়ে পরিবহন কর্মীকে অপহরণ, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
কাটমুন্ডু কনফারেন্সে মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে সার্ক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
দুপুরের মধ্যে ৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস
ভারতে পালাবার সময় তানোর যুবলীগ সেক্রেটারি আটক
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft