সোমবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
আমাদের অনিয়মে আমাদের কষ্ট
সাঈদ চৌধুরী
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৯:০১ PM
কষ্ট পাওয়ার মতো কারণ আমাদের আশেপাশে হাজারটি! এই কারণগুলো ওভারটেক করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই, কারণ আমরা এগুলো থেকে মুক্তি চাই কিন্তু সে পথে চলতে চাই না! আমরা কখনোই আমাদের শিক্ষাকে সঠিক জায়গায় প্রতিস্থাপিত করতে পারিনি। পিঁপড়ার অনুবীক্ষণিক চেহারা দেখলে আপনি যদি কল্পনা করেন অনেক বড় আকৃতির পিঁপড়া আপনাকে খেতে আসছে তবে আমি নিশ্চিত ভয়ে ঘুমোতে পারবেন না কারণ এই চেহারা ডাইনোসরের চেয়েও ভয়ানক। এবং এ ভয় আপনাকে মনস্তাত্বিক শাস্তিও দিতে শুরু করবে। এক সময় এই চিন্তা আপনাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে।

বাস্তবিক অর্থেও তাই। পিঁপড়ার মুখের ফরমিক এসিড এত বড় আকারে আমাদের উপর ছড়িয়ে পড়লে আমরা সত্যিই বাঁচবো না! 

গাজীপুরের তরুণ কবি ও লেখক শাহান সাহাবুদ্দিন’র বোনের মেয়ে আমাদের ছোট্ট শিশু রাস্তায় প্রাণ হারালেন কয়েক দিন আগেই। ওর বড় বোনের ¯পর্শ পেতে রাস্তায় দৌড় দিতেই ওর রক্তাক্ত দেহ ছিটিয়ে পড়লো সড়কে! নিথর সে দেহ নিয়ে বাবা, মা ও মামার সে কী আহাজারি! আর কোনোদিন ঠিকভাবে আমরা ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে খেতে পারবো এমন মৃত্যুর পর? সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। আমরা দেখি কিন্তু নির্বিকার চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আমাদের তেমন কিছুই করবার নেই। ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সড়কে মরণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নিয়মহীন ভাবে গতিতে চলে গাড়ি, আইন না মানার প্রবণতাও অনেক বেশী। এমন পরিস্থিতিতে একদিনে তৈরী হয়নি বরং আমরা এমন পরিস্থিতি পুষে পুষে এ পর্যন্ত এনেছি! 

রাস্তায় এখন অটো নামক মরণ যান চলে। অটো ট্রেনের আরেকটি অভিজাত প্রতিশব্দ বলা যেতে পারে। লাইন ছাড়া একমাত্র ট্রেন বাংলাদেশেই এভাবে চলে। যার ব্রেক কষলে ব্রেক কষার জায়গা থেকে কমপক্ষে বিশ গজ দূরে গিয়ে ব্রেক হয়! অটোতে কত প্রাণ গেল কিন্তু অটো বন্ধ করার কথাও আমরা বলার সাহস পাই না! তার প্রমাণ গত সপ্তাহ ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপের কথা বলার পর যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তা থেকে অনুমেয়!

কবে কবে আমাদের সমাজে পিঁপড়ার অনুবীক্ষণিক রূপ সামনে চলে এসেছে আমরা তা জানিই না! আমাদের ছোট্ট শিশু মায়ের মুখ এখনো ঘুমোতে দিচ্ছে না কাউকে। তার মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরে মাটির মায়া পিকনিক স্পটে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) এর দোতলা বাস ঝুলে থাকা বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টের তারে লেগে যায়। উচ্চ ভোল্টের তার এত নিচ দিয়ে যাবে কেন?   নিছক দুর্ঘটনা বলার জন্যই হয়তো তদন্ত কমিটি হবে, আমাদের তৎপরতা সব কিছুই হবে, হচ্ছে। নিছক দুর্ঘটনাই ধরে নিলাম। কিন্তু যারা ঝরে গেলেন? তারা কি একাই ঝরে পড়লেন? প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাথে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবার। 

দুর্ঘটনার আগের রাতেও মৃতদের মধ্যে একজন মায়ের সাথে হেসে কথা বলেছেন। কিন্তু পরের দিন সকালে এমন খবর শুনতে হবে কেউ জানে না। মৃত্যু কখন আসবে কেউ জানে না। কিন্তু এমন সব দুর্ঘটনা হচ্ছে আমাদের চারপাশে যার ক্ষেত্র তৈরী করছি আমরাই। 

রাস্তার জন্য আমরাই জমি দেই না। পৌরসভা থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন কোথায় সমস্যা নেই এ রাস্তার? গ্রামের ভেতরেও রাস্তা আটকে বেশী টাকায় জমি বিক্রির পায়তারা প্রায় ঘরেই দেখা যায়। শুধু তাই নয় রাস্তা আটকে দিয়ে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে কিছু সিন্ডিকেটও তৈরী হয়েছে বর্তমানে!

এই শ্রীপুরেই যদি মাওনা চৌরাস্তার ঘিঞ্চি কোনো গলির ভেতর বাড়িতে আগুন লেগে মানুষ মারা গেলেও কি রাস্তা বড় করা সম্ভব হবে?

ঢাকার কেমিক্যাল গুদামগুলো আমরা সরাতে সক্ষম হয়েছি? এখনো পুরান ঢাকায়ই রয়ে গেছে সেই গুদাম, এখনো ভয় রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের! তারপরও যেমন আছে তেমনই।

আমরা নিয়ম না মানার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। আমরা অভিনয় করে কাঁদি। আমরা মোনাফেক হয়ে যাচ্ছি দিন দিন! কথার সাথে কাজে মিল যেন নেই কোনো। নিজের পক্ষে না এলেই তার বিরোধিতা করি! এভাবেই চলছে। নিয়মের বেড়াজালে ফেলে কোথায় যে নিজেদের দায়ী করছি নিজেরাই জানি না!

খেয়াল করে দেখবেন এখন লেখার শেষে যত আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করতে হয় তা আগে করতে হতো না। সব কিছুতেই না জানা একটা অস্থিরতা, বোঝা না বোঝার ব্যত্যয়, অক্ষমতা ও নিজেদের একটি গন্ডিতে আটকে রেখে শিক্ষার জায়গাটিকে শৃঙ্খলিত করে রাখা।

আমার এ লেখাটি ফেলনা হিসেবে পড়ে রবে বড় লেখা বলে। কেউ পড়বেও না। কিন্তু কিছু শোক আমরা নিজেরাই তৈরী করছি সভ্যতার মৃত্যু ঘটিয়ে। সেফটি ট্যাংকে পড়লে মানুষ মরে আমরা জানি তাও নামিয়ে দেই। ঘরে সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরণ হয় তবু আমাদের কোনো ইন্ডিকেটর, প্রটেকশন ব্যবস্থা কিছুই নেই। রাস্তায় এত অনিয়মতান্ত্রিকতা তাতেও কোনো আইনের শ্রদ্ধা বাড়ানো যায়নি! দালালদের টাকা না দিলে ফেল করা ড্রাইভারদের সংখ্যা বেশী এবং সাথে সাথে ড্রাইভার হওয়ার অযোগ্যরা দালাল ধরেই ড্রাইভার হয় এখনো!

গত সপ্তাহে গাজীপুরের একজন স্কুল প্রতিষ্ঠাতার সাথে আলাপ হচ্ছিলো। তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছেন লিখিত পরীক্ষায়। এতে তার দুঃখ নেই কারণ তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি বললেন আসলে অনেক কিছু জানতে হয় পরীক্ষা দিতে গেলে। আমি সেটি জানিনি বলেই ফেল করেছি। কিন্তু তার আক্ষেপ অন্য জায়গায়। যারা পাশ করেছে তারা বেশির ভাগই অশিক্ষিত। কিন্তু তারা দালালের মাধ্যমে এসেছে বলে উত্তর বলে দেওয়া হয়েছে আগেই! এখন এমন করে দুর্নীতি করলে সে দুর্নীতি বন্ধ কীভাবে করা যাবে?

ম্যাক গাইভারের মতো বুদ্ধিদীপ্ত একজন প্রকৗশলীও বাংলাদেশে আসলে তার ইঞ্জিনিয়ারিং ফেইল করতে পারে। কারণ আমরা সব কিছুতেই রিফরমিং পছন্দ করি কিন্তু কখনোই নিউ ও অ্যাডভান্স কিছু করতে চাই না। 
তাই আমাদের বিপনণের জায়গা কেবল কষ্টই! যাদের অনুভবের ক্ষমতা বেশী তারা এখন আর ভালো থাকতে পাওে না। এভাবেই চলছে যেন আমাদের জীবন।

কবি হেলাল হাফিজের কবিতায় নীল কষ্ট, লাল কষ্ট বেশী বিক্রি করলেও এখন আমাদের লাল কষ্টই বেশী! রক্ত আমাদের গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত! রাস্তা এখন রাক্ষস, ঘর এখন বোম্ব, বিদ্যুৎ এখন আমাদের পোড়া মানুষের কারখানা আর অসাবধানতা আমাদের সস্তা শ্রমের বৃহৎ মজুরি! তাই কেবল প্রশ্নই এখন এমন  ‘কষ্ট নেবেন’?

তারপরও বলে যাই। আসুন আমরা আমাদের থেকেই একটু সচেতন হই। দেশে যে আইন আছে সেগুলো দিয়েই অনেক ভালো ফলাফল আনা সম্ভব। রাস্তায় যে অটোগুলো চলছে সে অটোর চালকদের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা জরুরি। তারা রাস্তায় এক লেনে চললে দুর্ঘটনা কমে যাবে অনেক। ওভারটেক বন্ধ করতে হবে যেকোনো রাস্তায়। অটোগুলোর দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশী হচ্ছে ওভারটেক এবং দ্রুত গতির জন্য। 

সরকারের কমিউনিটিভিত্তিক আইন ও নীতিমালার ক্ষেত্রে রাস্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশী জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন। জনপ্রশাসনের ক্ষেত্রে রাস্তা সকল কমিউনিটির জন্য ন্যূনতম আট ফিট যাতে করা যায় সে ব্যপারে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। কেউ রাস্তা আটকে দিলে তার বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিষয়টি সামনে আনতে হবে। রাস্তার প্রশস্ত না করে কোনোভাবেই যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান না হয় সে ব্যপারে সঠিক দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে সঠিকতা যাচাই খুব বেশী প্রয়োজন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। 

একটি সুন্দর বাংলাদেশের যে ছবি আমরা দেখি সেখানে আমাদের চাওয়াগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়গুলো সবার আগে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। 

লেখক : কলাম লেখক ও রসায়নবিদ। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
পদ্মায় চলছে ঢাকা-দিল্লির পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক
বারবার প্রস্রাব-তলপেটে ব্যথা, জরায়ুর টিউমারের লক্ষণ নয় তো?
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো টাইপিং ইন্ডিকেটার্স ফিচার
বেশি পেঁপে খেলে যা হয়
ভারত থেকে ১০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বৃদ্ধকে বিয়ে, ফুলশয্যার আগে দেনমোহর নিয়ে উধাও যুব মহিলা লীগ নেত্রী!
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ইবিতে মারামারি
হঠাৎ এফডিসিতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
গভীর রাতে যুবলীগ নেতার বাড়িতে আগুন, মা ও চাচি নিহত
ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft