প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:৫১ পিএম
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, একদল মুক্তিযোদ্ধা পুরোনো ঢাকার নারিন্দা থেকে জিপে করে নিয়ে এলো বেতারের স্টাফ আর্টিস্ট, বেতার কর্মকর্তা আবদুল মতিনকে অচল বেতারকে সচল করার জন্য। আবদুল মতিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে না যেয়ে তখন দেশে থেকেই নানাভাবে কাজ করছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে।
মতিন বেতারের ভেতরে ঢুকেই দেখলেন সকল রুমের দরজা খোলা। এলোমেলোভাবে পড়ে আছে ছেড়া তার, চেয়ার টেবিল সব।
টেলিফোনটি হাতে তুলে নিয়ে দেখলেন সচল আছে। ফোন করলেন বিদ্যুৎ বিভাগের চিফ এ এফ নুরুল্লাহ সাহেবকে। খুলে বললেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন অচল বেতার সচল করার কথা। তিনি এলেন সচল করলেন বিদ্যুতের সকল তার জোড়া দিয়ে। আবদুল মতিন এবার দায়িত্ব নিলেন বেতারকে সচল করার। যেখানে যা দরকার সব ঠিক করলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ঢাকায় যারা ছিলেন তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হলো গানের কপি। মুক্তিযোদ্ধাদের অনুরোধে দায়িত্ব ও নিলেন অনুষ্ঠান ঘোষণার। আবদুল মতিন ঘোষণা করলেনÑ ‘বাংলাদেশ বেতার থেকে আপনাদের সকলকেই স্বাগত জানাচ্ছি আমি আব্দুল মতিন। আাপনারা এখন শুনবেন একটি দেশাত্ববোধক গান ধন্য ধান্যে পুষ্পে ভড়া-আমাদের এই বসুন্ধরা...।’
আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা শুনলেও দেশের অচল বেতার প্রথম কবে কীভাবে, কারা সচল করেছিলেন তা জানি না বা আলোচনায়ও আনি না। দেশে এখন ৩০টিরও বেশি রেডিও চালু থাকলেও কেউ এই ইতিহাস নিয়ে কথা বলে।
আরো একটি কথা ’৫২’র ভাষা আন্দোলনেও এই বেতারের স্টাফ আর্টিস্ট ও বেতার কর্মকর্তা এবং পরবর্তিতে অভিনয় শিল্পী আবদুল মতিন বেতারেই হরতাল করেছিলেন। ক্রমাগত তিন দিন বেতারের নীরবতায় ভাষা আন্দোলন বেগবান হয়েছিল। বেতারে যোগদানের দিন বেতারের লগবুকে সেদিন তিনি অনুষ্ঠান সূচীটি ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় লিখেছিলেন। যেটি ছিল সরকারি খাতায় সর্বপ্রথম বাংলা লেখা। বাংলাদেশ বেতারের ৫০ বছর উদ্যাপন স্যুভিনির এবং তাদের অন্য কোথাও এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বেতার সেটি গায়েব করে দিয়েছে কারণ হিসেবে কথিত আছে এই আন্দোলনের সাথে কবি ফররুখ আহমেদও জড়িত ছিলেন বলে। অথচ আমি ১৯৮৮ সালে বেতারে কণ্ঠস্বর পরীক্ষার সময় বেতারের সাবেক ডিজি আশরাফ উজ জামান খান ও আবদুল আজিজ আমাকে সেই বেতার লগবুক দেখিয়েছেন যা আবদুল মতিন লিখেছিলেন। এই দুজন বেতার ব্যক্তিত্ব এখোনো জীবিত আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বললে সত্যতা পাবেন।
হেলাল হাফিজের জানাজায় এসে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা আক্ষেপ করে বললেন, হেলাল হাফিজকে কেন বিগত সরকার একুশে পদক দেয়নি জানি না। দেখি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে কী করা য়ায়। আমি নিশ্চিতÑ উনি জানেন না একুশে পদক কীভাবে দেওয়া হয়।
শিল্পকলা থেকে ফরম নিতে হয় শিল্পী-কবির পরিবারের বাইরের কাউকে, যারা বিগত সময়ে একুশে পদক পেয়েছেন তাদের দুজনের অনুমোদন/স্বাক্ষর লাগে এবং লাগে কবি/ব্যক্তিত্বের প্রমাণাদি, লাগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন। এবং এটি করতে হয় কোনো এক ব্রকারকে যে শিল্পী/ব্যক্তিত্বের কেউ হলে চলবে না। সরকারি উদ্দোগে হয় না। আমাদের ভাষা ইনিস্টিটিউট এই কাজটি নিস্বার্থভাবে, গবেষণা করে করতে পারে যদি সরকার তাকে অনুমোদন দেয়।
আপনারা জেনে থাকবেন ভাষা সৈনিক ১৪৪ ধারা ভেঙে যিনি মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সেই রওশন আরা বাচ্চুর কাছে তার ভাষা আন্দোলনের প্রমাণাদি চাওয়া হয়েছিল। উনি অভিমানে একুশে পদক ছাড়াই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এটি আমাদের সরকার পরিচালনা পরষদের ব্যর্থতা, আমাদের জাতির জন্য লজ্জা।
লেখক : শিল্পী ও সাংবাদিক
আজকালের খবর/আরইউ