আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন ও পুলিশে রদবদল নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপকালে এ ব্যাপারে এক দাবি জানিয়েছেন দলটির প্রতিনিধিরা, যেখানে তফসিল ঘোষণার পর একদিনে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) একযোগে বদলি চেয়েছেন তারা।
আর এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে রদবদল করার পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াত নেতারা।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে জামায়াতের নেতারা মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, রদবদলের বিষয়টি এক মাসে হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, ডিসি যেখানে-সেখানে রদবদল হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কোনো ডিজাইন করে একটি উদ্দেশ্যে কোনো জায়গা থেকে এটা হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন যখন এসব বিষয়ে এখতিয়ার লাভ করবে, তখন দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে লটারির মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশে রদবদল করা যেতে পারে। প্রশাসনে নিরপেক্ষতায় আস্থা রাখার উপায় হলো লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার হওয়া, যার যেখানে তকদিরে আছে।
গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন, আগেও দু-একটা নির্বাচনে হয়েছে—তফসিল ঘোষণার পর একদিনে, একরাতে সব ডিসি-এসপি রদবদল ঘটেছে। জাতি আস্থা রেখেছে, কমপ্লেইন ছিল না। নির্বাচন কমিশন এরকম একটা সিদ্ধান্ত না নিলে, এখন যেটা হচ্ছে পরিকল্পিত, ইনটেনশনাল। তিনি ইসিকে তাদের একমাত্র আস্থার জায়গা হিসেবে উল্লেখ করে তফসিলের পর একযোগে সব ডিসি-এসপি রদবদলের দাবি জানান।
জামায়াতের পক্ষ থেকে ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবিও জানানো হয়। সেক্ষেত্রে একজন নয় বরং চার-পাঁচ সদস্যের একটি দল নিয়োজিত করা ভালো বলে মত দেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়াও, আচরণবিধি ও প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে গণভোটের প্রসঙ্গ উঠে না আসার বিষয়টি তুলে ধরে জুলাই সনদের নিয়ে গণভোটের প্রচারণার দায়িত্বও ইসির বলে জানান তিনি।
সংলাপে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ইসির প্রস্তুতি ও আন্তরিকতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করলেও ‘এক্সিকিউটিভ লেভেলে’ প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ জোর দিয়ে বলেন, ইসি স্বাধীন হতে হলে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। সাহস দেখালে হবে না শুধু; স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু পলিসি লেভেলে স্বচ্ছতা থাকলে হবে না, এক্সিকিউটিভ লেভেলে সমন্বয় না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
এরপর তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলাতন্ত্রের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন কম এসেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, দলীয় সরকার না হলেও দলকানা লোক সরকারে আছে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ বদলি হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন দেখানো হচ্ছে। একটি দল আছে শুধু, এদেরকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কীভাবে নির্বাচন হবে, হৈ চৈ হবে। লটারির ভিত্তিতে ডিসি, এসপি, ওসি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ বদলি করতে হবে।
এসময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি অবৈধ-বৈধ অস্ত্র উদ্ধারে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
এছাড়া, বডিওর্ন ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার পক্ষে মত দেন হামিদুর রহমান আযাদ। সেইসঙ্গে ব্যালট পেপার নকল নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ডাকসু-চাকসুর মতো নির্বাচনে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সট্রা ব্যালট পেপার যেন কোনোভাবে বিতরণ না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
আজকালের খবর/ এমকে