
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় গবেষণা মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনের সততা, নিষ্ঠা ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত এই বিজ্ঞানী দাবি করেছেন-‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলাই আজ আমার অপরাধে পরিণত হয়েছে’।
২৩ অক্টোবর একটি গণমাধ্যমে 'ব্রিতে পদোন্নতি নিয়ে তীব্র বিভাজন' স্থবির গবেষণায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যস্ত মহাপরিচালক' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ড. মুকুল নাকি প্রকল্প থেকে 'নিয়মবহির্ভূত চাঁদা তোলার অভিযোগে তদন্তাধীন থেকেও পদোন্নতি পেয়েছেন।
এই প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. মুকুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি সবসময় সোচ্চার। সেই কারণেই কিছু অসাধু কর্মকর্তা এখন আমাকে টার্গেট বানিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন-প্রকাশিত সংবাদে আমার বক্তব্য নেওয়া হয়নি, যা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতির পরিপন্থী। যদি মতামত নেওয়া হতো, সত্য উদ্ভাসিত হতো। এখন এটি স্পষ্টভাবে একটি অপপ্রচার মনে হচ্ছে।
ড. মুকুল দাবি করেন, অতীতেও রাজনৈতিক কারণে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় আমাকে অপমান, লাঞ্ছনা ও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এখন সেই চক্রই আবার সক্রিয়।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড. মুকুল ব্রি’র গবেষণা কার্যক্রমে সততা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে ভূমিকা রেখেছে।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ড. মুকুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি একটি মিথ্যাচার। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি-এখানে ব্যক্তিগত বিরোধ ছাড়া কিছু নেই। কিছু লোক এখনো তাকে মানহানির চেষ্টা করছে। আমরা চক্রটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
হাইব্রিড রাইস ডিভিশনের ড. আফসানা আনসারী বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ষড়যন্ত্র। ড. মুকুলের সততা ও নীতিবোধের কারণে কিছু মহল ক্ষুব্ধ। আমি এই অপপ্রচারের নিন্দা জানাই।
পি.এস.ও. ও এফ.এম. পিএইচ.টি. বিভাগের ড. গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া মন্তব্য করেন, তিনি অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।
উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এস.এস.ও. ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই অপচেষ্টা ইনস্টিটিউটের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে চক্রটিকে শনাক্তের কাজ শুরু করেছি। এই ঘটনায় ব্রি’র গবেষণা অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছ-সততা ও গবেষণায় নিবেদিতপ্রাণ একজন বিজ্ঞানী যদি মিথ্যা প্রচারণার শিকার হন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও মনোবল কোথায় দাঁড়াবে?
গবেষক মহল বলছে, গণমাধ্যমের দায়িত্ব সত্য যাচাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা, যেন কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কোনো বিজ্ঞানীর মানহানি না ঘটে। ড. হাবিবুর রহমান মুকুলের বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
আমি সততা ও সত্যের পথে আছি, থাকবও। কারও অপপ্রচার আমাকে নীতির পথ থেকে সরাতে পারবে না।
আজকালের খবর/ এমকে