রবিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৫
চীনের সহায়তায় হারানো এলাকা পুনর্দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
চীনের সহায়তায় হারানো এলাকা পুনর্দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর জন্য টানা বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

মাসের পর মাস লড়াই শেষে মিয়ানমারের কিয়াউকমে শহর দখলে নিয়েছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী তা ’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। তখন মনে হয়েছিল, সামরিক জান্তার মনোবল হয়তো ভেঙে পড়েছে। কিন্তু চলতি মাসে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী শহরটি ফের দখলে নেয়। এই উত্থান-পতনই বলে দিচ্ছে, মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্রে শক্তির ভারসাম্য কতটা পাল্টে গেছে এবং এখন সেটি স্পষ্টতই জান্তার পক্ষে।

তবে এর জন্য ভয়াবহ মূল্য দিয়েছে কিয়াউকমে। জান্তার টানা বিমান হামলায় শহরের বড় অংশ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যুদ্ধবিমান থেকে অন্তত ৫০০ পাউন্ড বোমা ফেলা হয়েছে, ড্রোন ও আর্টিলারি হামলায় শহরের বাইরের বিদ্রোহী ঘাঁটিগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলার তোপে শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা পালিয়ে গিয়েছিল, যদিও সেনা নিয়ন্ত্রণ ফেরার পর কিছু মানুষ ফিরতে শুরু করেছে।

টিএনএলএ মুখপাত্র তার পার্ন লা বলেন, এ বছর সেনাবাহিনীর সৈন্য, ভারী অস্ত্র আর বিমান শক্তি অনেক বেড়েছে। আমরা যতটা পারি, প্রতিরোধ করছি।

কিন্তু এরপরই মিয়ানমার সেনাবাহিনী টিএনএলএর দখলে থাকা শেষ শহর হিসপাও-ও পুনর্দখল করে। ফলে চীনা সীমান্ত পর্যন্ত প্রধান সড়ক পুরোপুরি জান্তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

চীনের সমর্থনে জান্তার পাল্টা আঘাত


বিশ্লেষকদের মতে, এই পুনর্দখল সম্ভব হয়েছে মূলত চীনের সহায়তায়। বেইজিং প্রকাশ্যে জান্তার ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশজুড়ে ভোট আয়োজনের অজুহাতে সেনাবাহিনী এখন যতটা সম্ভব অঞ্চল পুনর্দখলের চেষ্টা করছে।

এ বছর তাদের সাফল্যের বড় কারণ হলো, তারা আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং চীন থেকে উন্নত ড্রোন ও প্রযুক্তি সংগ্রহ করেছে। আগে বিদ্রোহীরা সস্তা ড্রোন দিয়ে সুবিধা নিলেও এখন জান্তা বাহিনী চীন থেকে হাজার হাজার ড্রোন কিনে ব্যবহার শিখেছে। তারা মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা দিয়ে নির্ভুলভাবে বোমা বর্ষণ সম্ভব হচ্ছে।

চীন ও রাশিয়ার সরবরাহ করা সমরাস্ত্র দিয়ে নিরন্তর হামলায় সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু বাড়ছে। চলতি বছর অন্তত এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে অনুমান করা হয়, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

বিভক্ত প্রতিরোধ

অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ আন্দোলন ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এটি মূলত শতাধিক ‘জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী’ (পিডিএফ) ও জাতিগত গোষ্ঠীর সশস্ত্র দলে বিভক্ত। তাদের অনেকের হাতেই পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই, আবার কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে জাতিগত স্বায়ত্তশাসনকেই অগ্রাধিকার দেয়। ফলে কোনো ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে শান রাজ্যে তিনটি জাতিগত গোষ্ঠীর জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করে। তারা অল্প কয়েক সপ্তাহে ১৮০টিরও বেশি সেনা ঘাঁটি দখল করে নেয়, বিশাল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয়, হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, জান্তা সরকার হয়তো ভেঙে পড়বে। কিন্তু তা হয়নি।

আন্তর্জাতিক কৌশল বিশ্লেষক মরগান মাইকেলস বলেন, সেই সময় দুটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছিল—প্রথমত, বিদ্রোহী দলগুলোকে একীভূত জাতীয় আন্দোলন হিসেবে দেখা; দ্বিতীয়ত, মনে করা হয়েছিল সেনাদের মনোবল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

এরপর জান্তা জোরপূর্বক সেনা নিয়োগ শুরু করে। অনেকে পালিয়ে যায় বা প্রতিরোধে যোগ দেয়, তবে প্রায় ৬০ হাজার নতুন সদস্য সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়। অভিজ্ঞতা কম হলেও, এদের যোগদান জান্তাকে নতুন গতি দেয়।

চীনের নিয়ন্ত্রণ ও ড্রোন যুদ্ধ

‘আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট’ (এসিএলইডি)-এর বিশ্লেষক সু মনের মতে, জান্তার ড্রোন হামলা এখন প্রায় অব্যাহত, যা বিদ্রোহীদের প্রাণহানি বাড়াচ্ছে এবং তাদের পিছু হটতে বাধ্য করছে।

তিনি বলেন, চীনের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদ্রোহীদের পক্ষে ড্রোন সংগ্রহ করা বা বানানো এখন কঠিন। ফলে বিদ্রোহীদের জন্য ড্রোনের দাম বেড়ে গেছে, আর জান্তার হাতে উন্নত ‘জ্যামিং’ প্রযুক্তি থাকায় তাদের অনেক ড্রোন আকাশেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।

সূত্র: বিবিসি

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ন্যায় ব্যর্থ হলে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি
আওয়ামী লীগের প্রত্যাবর্তনের সব দরজা বন্ধ করতে হবে: সালাহউদ্দিন
‘ক্যাফে’ মাতালেন তানজির তুহিন
‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে, এটা কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন’
হুমায়ূনের ‘কিছুক্ষণ’ উপন্যাস অবলম্বনে মোশাররফ করিম
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আপনারা হক কথা বলতে পিছপা হবেন না: সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে রেজাউল করিম
রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী মোটর চালক দলের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ওষুধ বিতরণ
আইনের প্রতি সেনাবাহিনীর অভাবনীয় শ্রদ্ধা
টেকনাফে অপহরণ ও পাচারের ফাঁদে আটকে থাকা ৪৪ নারী-শিশু উদ্ধার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবন্ধী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ ও ছাতা বিতরণ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft