
ফ্রান্সের বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৫০তম রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম বা আবাসিক বৃত্তি পেয়েছেন ছয়জন তরুণ নির্মাতা। তারা হলেন— আলিকা বেদনারিকোভা (স্লোভাকিয়া), ফেদেরিকো লুইস (আর্জেন্টিনা), মাকসিম নাকোনেচনি (ইউক্রেন), লাইস সান্তোস আরাউজো (ব্রাজিল), বারান সারমাদ (ইরান) এবং ডিয়ান ওয়েইস (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
তারা ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্যারিসে অবস্থান করবেন এবং তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য উন্নয়নে দিকনির্দেশনা পাবেন। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি বিশ্বের উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীল সহায়তা প্রদান করে আসছে। ৫০তম আসরেও আগের মতোই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে নতুন কণ্ঠ ও বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
এক নজরে সুযোগ পাওয়া ছয় নির্মাতা
মাকসিম নাকোনেচনি (ইউক্রেন) :তিনি কিয়েভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব থিয়েটার, সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন থেকে পরিচালনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বাটারফ্লাই ভিশন’ ২০২২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল।
৫০তম কান আবাসিকে সুযোগ পেয়েছে মাকসিম বলেন, ‘আমার জন্য এই রেসিডেন্সিতে অংশ নেওয়া মানে নিরাপদ পরিবেশে নিজের চলচ্চিত্র প্রকল্পে মনোনিবেশের সুযোগ পাওয়া। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয় নির্মাতারা অর্থ, সহকর্মী ও নিরাপত্তার সংকটে আছেন—এই প্রোগ্রাম সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমার চলচ্চিত্রকে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।’
বারান সারমাদ (ইরান): তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘স্পটেড ইয়েলো’ ২০১৯ সালে প্রদর্শিত হয়েছিল লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। ২০২০ সালে তিনি কানের পাম দ’র মনোনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘অর্থডনটিক্স’-এর প্রযোজক ছিলেন। বর্তমানে তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মেলো পিংক’-এর চিত্রনাট্য তৈরি করছেন।
এই আবাসিকে সুযোগ পেয়ে বারান সারমাদ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি এমন এক সমাজে বেড়ে উঠেছি যেখানে মেয়েদের জন্য নেতৃত্বমূলক স্বপ্নগুলো অবিশ্বাসের সঙ্গে দেখা হতো। চলচ্চিত্র নির্মাণও ছিল তেমনই এক সাহসী স্বপ্ন। কান রেসিডেন্সিতে অংশ নেওয়া আমাকে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা দেয় যে, আমি সঠিক পথে আছি’।
লাইস সান্তোস আরাউজো (ব্রাজিল): ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের মেসিও শহরে জন্ম নেওয়া এই নির্মাতা ‘আগুদা সিনেমা’ নামের প্রযোজনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তার স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘ইনফ্যানতারিয়া’ ৭৩তম বার্লিনালে-তে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছিল। তিনি বর্তমানে একই নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত।
তার ভাষায়, ‘লেখালেখিকে দিনের কেন্দ্রে রাখা আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল। কান রেসিডেন্সি সেটি বাস্তব করেছে।’
ফেদেরিকো লুইস (আর্জেন্টিনা) :১৯৯০ সালে বুয়েনস আয়ার্সে জন্ম নেওয়া এই নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাইমন দ্য লা মনটানা’ ২০২৪ সালে ‘লা সেমাইন দ্য লা ক্রিটিক’-এ গ্র্যান্ড প্রিক্স জেতে। বর্তমানে তিনি তার নতুন প্রকল্প ‘দ্য ডগ ট্রেইনার’ নিয়ে কাজ করছেন।
কান আবাসিকে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘লা রেসিডেন্স আমাকে স্বপ্ন দেখার এক বিশাল পরিসর দিচ্ছে। আমি চাই এই সময়ে লিখব, পড়ব এবং সিনেমা নিয়ে ভাববো—অন্য কিছু নয়।’
আলিকা বেদনারিকোভা (স্লোভাকিয়া): তিনি প্রাগভিত্তিক স্লোভাক নির্মাতা। তার চলচ্চিত্র ‘লিকুইড ব্রেড’ (২০২১) নির্বাচিত হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবের লা সিনেফ বিভাগে। বর্তমানে তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অ্যাটেনশন হুরস’ তৈরি করছেন।
তার ভাষায়, ‘চিত্রনাট্য বিকাশের শুরুতে এমন সহায়তা পাওয়া এক বিরল সুযোগ।’
ডিয়ান ওয়েইস (দক্ষিণ আফ্রিকা) : তিনি ইউনিভার্সিটি অব কেপ টাউন থেকে এমএ সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনে পিএইচডি করছেন। তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভুলটারেস’ (২০২৫) ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে ইউনিফ্রেঞ্চ স্বল্পদৈর্ঘ্য গ্র্যান্ড প্রিক্স অর্জন করেন।
কান আবাসিক প্রসঙ্গে ডিয়ান বলেন, ‘প্যারিসে সাড়ে চার মাস কাটিয়ে আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা— এটা এক স্বপ্নের মতো।’
বলা দরকার, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কানের রেসিডেন্সি বিশ্বজুড়ে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য সৃজনশীল বিকাশ ও আন্তর্জাতিক মেন্টরশিপের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। ৫০তম আসরে অংশ নেওয়া এই ছয় নির্মাতাই ভবিষ্যতের বৈশ্বিক সিনেমার নতুন কণ্ঠ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে বিশ্বাস করে কান কর্তৃপক্ষ।
আজকালের খবর/আতে