ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে দলটি, অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করাই লক্ষ্য।
দলের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী ঠিক করার পাশাপাশি সমমনা ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড় ও মনোনয়নের বিষয়টিও দ্রুত সুরাহা করতে চাইছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ ক্ষেত্রে বেশি সময় নেওয়া হলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য এখন যেসব আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি বা প্রার্থিতা নিয়ে সাংঘাতিক বিরোধ রয়েছে, যা মিটমাট না হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে—এমন এলাকাগুলোর দিকে। সে জন্য স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতাকে বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের একসঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে ডেকে কথা বলছেন।
ইতোমধ্যে বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী অঞ্চলের বেশ কিছু আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ও সাংগঠনিক নেতারা কথা বলেছেন। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে বরিশাল ও কুমিল্লা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিরোধপূর্ণ আসনগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তাদের সহযোগিতা করছেন।
এটাকে প্রার্থী বাছাইয়ে নির্বাচনপূর্ব ‘প্রাক্–রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সেখানে সবাইকে ডেকে কথা বলা হচ্ছে যে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাইকে তা মানতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেড এম জাহিদ হোসেন গত কয়েক দিনে চাঁদপুর-২ আসন (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (আখাউড়া ও কসবা), বরিশাল-২ (উজিরপুর ও বানারীপাড়া), বরিশাল-৫ (বরিশাল সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত) ও ঝালকাঠি-২ (সদর ও নলছিটি) আসনসহ আরও কয়েকটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ছয়জনকে গুলশানের কার্যালয়ে ডাকা হয়। তারা হলেন জালালউদ্দিন, এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী, তানভীর হুদা, ওবায়দুর রহমান, শামীম আহমেদ ও সরকার মাহবুব আহমেদ। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদে থাকা এই ছয় নেতাই দলীয় মনোনয়নযুদ্ধে নেমেছেন।
এ ছাড়া বরিশাল-২ আসনে এস সরফুদ্দিন আহমেদ (সান্টু), দুলাল হোসেন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কাজী রওনাকুল ইসলামকে বৈঠকে ডাকা হয়। ঝালকাঠি-২ আসনে মাহবুবুল হক (নান্নু) ও ইলেন ভুট্টো বৈঠকে উপস্থিত হন।
ডাক পেয়ে গুলশানের কার্যালয়ে এসেছিলেন, এমন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বৈঠকের সারকথা হচ্ছে যেকোনো মূল্যে দলীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, প্রতিটি আসনেই দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজনকেই মনোনয়ন দিতে হবে। এতে অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হতে পারেন। কিন্তু দল যাকে মনোনয়ন দেবে, দলের স্বার্থে সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। বৈঠকে এ বিষয়ে সবাইকে একমতে আনতে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বৈঠকে সবাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে তারা কেউ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করবেন না।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে সাক্ষাৎকার ও মূল্যায়নের মাধ্যমে দলের মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এবার প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় দলটি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক দক্ষতা, আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং এলাকার জনসম্পৃক্ততাকে। অতীতে আর্থিক সামর্থ্য ও প্রভাবশালীদের ওপর নির্ভর করার প্রবণতা থাকলেও, এবার তৃণমূল নেতাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
এ ছাড়া উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করতে ইতিমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে গোপনে প্রার্থী জরিপ করিয়েছেন। এবার প্রার্থিতার ক্ষেত্রে জরিপ প্রতিবেদনকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আজকালের খবর/ এমকে