সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আল জাজিরার বিশ্লেষণ
সমগ্র বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন নেতানিয়াহু!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:০৭ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতায় নতুন এক অধ্যায় যোগ করল ইসরায়েলের দোহা হামলা। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কাতারের রাজধানীতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্যবস্তু ছিল হামাসের শীর্ষ নেতারা, যারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু এই হামলা শুধু একটি রাজনৈতিক আলোচনা নস্যাৎ করেনি, বরং পুরো বিশ্বকে যেন প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে।

দুই বছরেরও কম সময়ে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক মহলে এই হত্যাযজ্ঞকে ইতোমধ্যেই গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে দোহায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা একে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এবার আঘাত হানা হয়েছে দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে নয়, বরং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভেতরে।

যুদ্ধবিরতি বনাম ইসরায়েলের নীতি
ইসরায়েলের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়— যুদ্ধবিরতির ধারণা তাদের রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্রও যখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, তখনও তেলআবিব তাতে কান দেয় না। কারণ ইসরায়েলি রাষ্ট্র টিকে আছে দখল, নিপীড়ন এবং ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার নীতির ওপর।

ফলে দোহায় হামলা শুধু কাতার নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এতদিন ইসরায়েলকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলা হলেও এখন অনেকেই বুঝতে শুরু করেছে, এই রাষ্ট্র কূটনৈতিক শিষ্টাচার বা আন্তর্জাতিক আইন মানতে মোটেই বাধ্য নয়।

পশ্চিমাদের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া
দোহা হামলার পর প্রথমবারের মতো ব্রিটেন, ফ্রান্স এমনকি ভারতও প্রকাশ্যে নিন্দা জানিয়েছে। গাজার গণহত্যায় নীরব থাকা এ দেশগুলো হঠাৎই মুখ খুলল। প্রশ্ন জাগে— গাজায় হাজারো নারী-শিশুর মৃত্যুর চেয়ে কাতারে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কি তাদের কাছে নৈতিকভাবে বেশি ভয়াবহ? নাকি তারা এবার টের পাচ্ছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন তাদের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে?

এখানেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভণ্ডামি প্রকট হয়ে ওঠে। গাজার অগণিত লাশ তাদের বিবেককে নাড়া দেয়নি। কিন্তু কাতারে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই তাদের কাছে ‘লাল দাগ’ হয়ে দাঁড়াল। অর্থাৎ বার্তাটা পরিষ্কার— ইসরায়েল আর চাইলেই যত্রতত্র হামলা চালাতে পারবে না।

ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী অবস্থান
হোয়াইট হাউস মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট দোহা হামলার নিন্দা জানালেও, সঙ্গে যোগ করেছেন— “হামাসকে নির্মূল করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য।” এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের মূল কৌশলকে সমর্থন করে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কাতারকে আশ্বস্ত করেছেন, এমন হামলা আর হবে না। কিন্তু বাস্তবে তিনি ইসরায়েলের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণই রাখতে পারছেন না। ইসরায়েল এখন নিজস্ব কৌশলে শুধু প্রতিবেশী নয়, দূরবর্তী রাষ্ট্রের ভেতরেও হামলা চালাচ্ছে। ফলে ওয়াশিংটনের আশ্বাস কাতারের জন্য কার্যত ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।

‘লম্বা হাত’ নীতি ও নেতানিয়াহুর হুমকি
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত শত্রুদের যে কোনো জায়গায় আঘাত করবে।’ একই সুরে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কাতারকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘যেসব দেশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়, তারা যদি তাদের হস্তান্তর না করে তবে ইসরায়েল নিজে ব্যবস্থা নেবে।’

অর্থাৎ ‘সন্ত্রাসী’ কাকে বলা হবে, তা নির্ধারণের অধিকারও ইসরায়েল নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে তারা নিজস্ব সংজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ চালাচ্ছে।

ছয় দেশে হামলার নজির
আলজাজিরার তথ্যমতে, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ইসরায়েল অন্তত ছয়টি দেশে হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিন ও কাতারের পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। এর ফলে কার্যত পুরো মধ্যপ্রাচ্যই পরিণত হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে।

বিশ্বযুদ্ধের ছায়া
মোসাদ আগে ইউরোপেও ফিলিস্তিনিদের টার্গেট করেছে। কিন্তু গাজায় পূর্ণাঙ্গ গণহত্যার পাশাপাশি বিদেশে নতুন আঘাত হানার মাধ্যমে ইসরায়েল দুটি লক্ষ্য পূরণ করছে— ১. নিজেদের জনগণের কাছে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অজুহাত তৈরি। ২. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধাপরাধের দায় আড়াল করা।

প্রশ্ন হলো— ইসরায়েলের এই ‘দীর্ঘ হাত’ থেকে আসলে কে নিরাপদ? আর কতদিন তারা আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাবে?

পরিশেষে

দোহা হামলার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— ইসরায়েল কেবল ফিলিস্তিন নয়, গোটা বিশ্বকেই যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে। এটি যেন এতদিনের অঘোষিত সত্যকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। বিশ্বশক্তির জন্য এটি এক গুরুতর সতর্কবার্তা : যদি এখনই ইসরায়েলকে লাগাম না দেওয়া হয়, তবে পরবর্তী লক্ষ্য কে হবে, তা কেউই বলতে পারবে না।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সিলেটের ডিসি সারওয়ার আলমকে শোকজ
আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমার শক্তি : মোশারফ হোসেন
আশুলিয়ায় সন্তানসহ শ্রমিক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপি’র দুঃসময়ের নেতা ফজলে হুদা বাবুল
দেশের ১২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, কারাগারে মার্কিন নাগরিক
উলিপুরে এসডিএফ’র স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা
বেকারকে বিয়ে করে বসিয়ে খাওয়াতে চান তানিয়া
ঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ৬ সন্তানের জন্ম দিলেন নারী
ভেনেজুয়েলা উত্তেজনার মধ্যেই পুয়ের্তো রিকোয় নামল মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft