রাস্তায় যেদিন নামব, সেদিন লাঠি না বন্দুকও কিছু করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
টাঙ্গাইল শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ঘিরে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “আমি অবাক হয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। এটা তো একটা রেকর্ড হয়ে রইল। মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হবে। তাদের মিটিং ১৪৪ ধারা জারি করে বন্ধ করা হয়েছে।
“এটা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমার মরার জন্য কোনো ভয় নেই। আমি চাই দেশের শৃঙ্খলা থাকুক। যেদিন আমরা রাস্তায় নামব, সেদিন লাঠি না বন্দুকও কিছু করতে পারবে না। যে আশা ও ভরসা নিয়ে যৌবনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। সেই আশা এবং ভরসা আজকে ধূলিসাৎ হতে চলেছে।”
সোমবার বিকালে টাঙ্গাইল শহরের কবি নজরুল সরণিতে নিজ বাসভবনের সামনে ‘কাদেরিয়া বাহিনীর’ মুক্তিযোদ্ধাদের জরুরি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমার বাসায় আক্রমণ করেছে, এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে এদেশের সকলের বাসায় আক্রমণ করা সম্ভব। কারও নিরাপত্তা নেই।
“দেশ যদি পাকিস্তান হয়ে যেত, আমি পাকিস্তান ভেঙেছিলাম তাহলে আইনানুগ আমার ফাঁসি হয়ে যেত। এতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না, এখনও নাই। সেজন্যই বলছি দেশে আইনশৃঙ্খলা নাই।”
যারা চব্বিশে বিজয়ী হয়েছে, তারা যদি এখন এইভাবে ব্যর্থ হয়, ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবে না মনে করেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “আমার বাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে যদি দেশে শান্তি হয় আমি তাতেই রাজি। এখন আমার ৮০ বছর বয়স হয়েছে, আমি এখন চলে যেতে পারলে আরও খুশি।
“সরকারকে বলছি, শেখ হাসিনার পতন আর মুক্তিযুদ্ধের পতন এক কথা না, শেখ হাসিনার পতন আর বঙ্গবন্ধুর পতন এক কথা না, শেখ হাসিনার পতন আর স্বাধীনতার পতন এক কথা না। এই জিনিসগুলো এখন কেউ কেউ বুঝতে চাচ্ছেন না।”
রোববার মধ্যরাতে টাঙ্গাইল শহরে বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত এ মুক্তিযোদ্ধার বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকালে জরুরি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় ‘কাদেরিয়া বাহিনী’।
কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা বিকালে শহরে কাদের সিদ্দিকীর বাসভবন থেকে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার আগ মুহূর্তে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে কাদের সিদ্দিকী ও কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা বাসভবনের নিচতলায় সমাবেশ করেন।
এতে কাদের সিদ্দিকী ছাড়াও যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল, ফজলুল হক বীর প্রতীক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সখিপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সজীব এবং বাসাইল উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপু বক্তব্য দেন।
এর আগে রোববার বিকালে বাসাইল উপজেলায় কাদেরিয়া বাহিনী ও ছাত্র সমাজের ব্যানারে একইস্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। ওইদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ ছিল।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিনব্যাপী তৎপর ছিল। পরে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র সমাজের কেউই শহীদ মিনার চত্বরে যাননি।
আজকালের খবর/ এমকে