
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে দিশেহারা প্রবাসী আজাদ এবং ব্যবসায়ী ফরিদ আলমের পরিবার। মূলত একচেটিয়া মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তাদের পরিবার। গতকাল শনিবার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তাদের বিল্ডিংয়ের ছবি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতার নামে চালিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে তাদের চারতলা বিশিষ্ট ভবন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।
কক্সবাজার শহরের বাকঁখালী নদী পাড়ে অবৈধ পন্থায় গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদে জোর তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। টানা তিনদিনের উচ্ছেদ কার্যক্রমে বাকঁখালী পাড়ের প্রায় ৬০ একরের মতো নদীর জমি উদ্ধার হয়েছে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে ৪০০ এর বেশি। এই অভিযানে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন রেজিস্ট্রার জমির মালিকেরাও উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ( ৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নদীর নুনিয়ারছড়া ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার কথা ছিল। সকালে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে ৬ নম্বর ঘাটের দিকে খননযন্ত্র নেওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনগণ সেটি আটকে দেন এবং উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে রাস্তা অবরোধ না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
ঘটনার পরদিন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘অভিযান আটকে দিলেন দখলদাররা’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, শহরের নুনিয়ারছড়া ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে দাঁড়িয়ে আছে দু’টি ভবন। এর মধ্যে একটি ১০তলা ভবন এবং অন্যটি ৫তলা। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, দু’টি বড় ভবনের মালিক আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার এবং তার পাশের চারতলা ভবনটি উক্ত নেতার ভাইয়ের। প্রকৃতপক্ষে চারতলা ভবনটির মালিক ভিন্ন ব্যক্তি। সেখানে আওয়ামী লীগের ওই নেতার কোনো ভাগ বা অংশ নেই। মূলত চারতলা ভবনে তিনজনের মালিকানা রয়েছে। এরমধ্যে একজন মালিক হলেন- ফরিদ আলম, তার পিতা ফজল গণি।
এ ব্যাপারে ফরিদ আলম জানান, আমি ভবনটি নির্মাণ করেছিলাম ২০২৩ সালে। ব্যক্তি মালিকানা খতিয়ানের রেজিস্ট্রিভুক্ত জমি ক্রয় করে ভবন নির্মাণ করেছি এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর অনুমতিক্রমে উক্ত জমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন রেজিস্ট্রিভুক্ত জমি। আমার কাছে কউক এর অনুমোদিত প্যান্টাগ্রাফ ও অন্যান্য কাগজপত্রাদি রয়েছে। পরে এসব কাগজপত্র প্রতিবেদককে দেখানো হয়।
এতে দেখা যায়, আরএস খতিয়ান নং-১১৪৫ এর দাগ নং-২৬২, ২৬৩, এমআরআর খতিয়ান নং-৭৬৬, ৭৭৯ দাগ নং-৪৭৭, ৪৭৮, ৪৭৯ ও ৪৮০ এবং বিএস রেকর্ডিয় খতিয়ান নং-২৮৫, নামজারী খতিয়ান নং-৬৪২০, ৬৪২৩, ৬৭৩৬ এর দাগ নং-২২৬১/২২০১৯/২৩৮১৫, ২২৬১/২২০১৯/২৩৮১৭, ২২৬১/২২১১০/২৪২৩৯/ ২২৬১/২২০৪৯/২৩৪১৫/২৪২৪০ মোতাবেক বর্তমান এই চারতলা ভবনের মালিক ফরিদ আলম গং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, এই চারতলা বিশিষ্ট ভবনের মালিক ফরিদ আলম একজন ব্যবসায়ী। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। উক্ত ভবনের একাংশের মালিক প্রবাসী মোহাম্মদ আজাদ, তিনি ফরিদের মেয়ের স্বামী। মূলত জামাই-শ্বশুর মিলেই এই বিল্ডিংয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তারা।
ফরিদ আলমের পরিবারের দাবি, মূলত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পত্রিকায় তাদের বিল্ডিংয়ের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে অস্থির পরিস্থিতিতে সবকিছু অস্বাভাবিক এবং ঘোলাটে। এর মধ্যে মিডিয়া কাভারেজের মাধ্যমে অনেক কিছুই সম্ভব। তাই আওয়ামী লীগ নেতার বরাতে আমাদের ভবনের নাম দিয়ে একটি কুচক্রী মহল যড়যন্ত্রের ছক আঁকছে। জায়গার কাগজ এবং বিল্ডিংয়ের সমস্ত তথ্য জেনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগী ফরিদ আলমের পরিবার।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন শাখা) কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, নদীর জায়গা না হলে কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ভবন উচ্ছেদ করা হবে না।
আজকালের খবর/ওআর