পুলিশ বলছে মুখ চেপে ধরা ছবিটি ‘এআই জেনারেটেড’, মানছেন না সাংবাদিকরা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৪৯ পিএম
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় এক বিক্ষোভকারীর মুখ চেপে ধরার যে ছবিটা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ‘এআই জেনারেটেড’ বলছে পুলিশ।

পুলিশের ভাষ্য, ‘জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে এ ছবি তৈরি করা হয়েছে। আদতে এরকম কোনো ‘ঘটনা ঘটেনি’।

তবে ঢাকার তিনটি দৈনিকের তিনজন ফটো সাংবাদিক বলছেন, তারা প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে থেকে ওই ঘটনার ছবিটি তুলেছেন।

তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে শাহবাগে জড়ো হন। তাদের সামনের কাতারে ছিলেন মূলত বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত বাঁধে।

পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

ওই সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ ঘিরে ধরে মারধর করছে–এমন কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আলম এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছেন– এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়।

বুধবারের এই ছবিটির সঙ্গে ২৪’ এর জুলাই আন্দোলনের সময়কার একটি মুখ চেপে ধরা ছবি জোড়া দিয়ে বা দুটো ছবির তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

অভ্যুত্থানের আগের সময়কার পুলিশের মত এখনকার পুলিশও ‘মুখ চেপে কণ্ঠরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়কার আলোচিত ওই ছবিটিতে শাহবাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি হাই কোর্টের সামনে এক আন্দোলনকারীর মুখ চেপে ধরেছিলেন। সেই ছবিটি গ্রাফিতি, কার্টুন, মিমসহ অনেকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়, কণ্ঠরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।

বুধবারের মুখ চেপে ধরার ছবি নিয়ে বিব্রত পুলিশ এখন পুরো ঘটনা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ তুলছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমকে নিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরার একটি ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

“কে বা কারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে উক্ত ছবিটি তৈরি করে জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় তা সম্পূর্ণ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির উদ্দেশে তৈরি ছবি ও তা প্রচারের সাথে জড়িতদের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় ডিএমপি। একইসাথে এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হল।”

‘ফ্যাক্ট চেক’

কোনো ছবি এআই দিয়ে তৈরি করা কিনা, তা যাচাইয়ের অনেকগুলো অ্যাপ রয়েছে। এর মধ্যে ‘সাইট ইঞ্জিন’ নামের একটি অ্যাপ দিয়ে ছবিটি যাচাই করা হয়। অ্যাপটি বলছে, এই ছবিটি এআই জেনারেটেড নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাবিদকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী পুলিশের দাবি খণ্ডন করতে সাইট ইঞ্জিন অ্যাপের ফলাফল ফেইসবুকে তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখেছেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছবিটি এআই জেনারেটেড। … পুলিশ কোন সফটওয়্যার দিয়ে, মেটাডেটা এনালাইসিস করেছে, কী দেখে মনে হল ছবিটা এআই জেনারেটরেড–তার কোনো ব্যাখ্যা নাই।

“এআই জেনারেটেড ছবি কী না তার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হল মেটা ডেটা এনালাইসিস করা। আমার জানা মতে, পুলিশের মধ্যে এ ধরনের অ্যানালিস্ট নেই।”

এই শিক্ষক বলেন, “খুব ক্রুশিয়াল না হলে এখন আর ফ্যাক্ট চেক করি না। কিন্তু পুলিশের দাবির পর ছবিটার একটা গ্রামার দেখেই মনে হয়েছে এই ছবি এআই জেনারেটেড নয়। এআই ছবিতে যদি একাধিক হাত থাকে, তাহলে হাতগুলো একসাথে ৯০ এবং ১২০ ডিগ্রি এঙ্গেলে থাকতে পারে না। সেজন্য ছয়টা টুলস দিয়ে পরীক্ষা করলাম। ফলাফল ছবিটা রিয়েল।

“গণমাধ্যমের কাজ ‘তিনি হেসে বলেন, কেঁদে বলেন, দাবি করেন’–এসব বিশেষণ দিয়ে জানানো নয়। গণমাধ্যমের দায়িত্ব সত্য জানানো। যেহেতু এআই আর ফ্যাক্ট চেকিং প্রশিক্ষণ দিই, তাই পুলিশের এই ছবিটা ভালো উদাহরণ হয়ে থাকল।”

ফটোগ্রাফারদের ভাষ্য

মুখ চেপে ধরার ওই ছবি বৃহস্পতিবার প্রথম পাতায় ছেপেছে দৈনিক মানবজমিন, ছবিটি তুলেছেন পত্রিকাটির ফটো সাংবাদিক আবু সুফিয়ান জুয়েল।

ওই ছবিতে মুখ চেপে ধরে কিছুটা ঝুঁকে থাকার ভঙ্গিতে রয়েছেন দুজনই। ছবিটি ‘এআই জেনারেটেড’ বলে যে দাবি পুলিশ করেছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবু সুফিয়ান বলেন, “ভাই আমার ছবিই সাক্ষী যে এটা আমি নিজে তুলেছি। ওখানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জয়ীতা রায়, ডেইলি স্টারের অর্কিড চাকমাও ছিলেন। তারাও ছবিটা পেয়েছেন।”

বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক জয়ীতা রায় ফেইসবুকেও ছবিটি শেয়ার করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছবিটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে আবু সাঈদের নামে যে হাসপাতালটি করা হয়েছে, তার সামনে থেকে তোলা বুধবার দুপুর ২টার দিকে।

“শিক্ষার্থীদের মিছিলটিকে ঠেকাতে না পেরে পুলিশ যখন জলকামান, টিয়ার শেল ছোঁড়া শুরু করে, তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তা পেছন থেকে এক বিক্ষোভকারীকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে সামান্য ধস্তাধস্তির মত হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে যায় সেই ঘটনাটা। পরে অবশ্য অন্য বিক্ষোভকারীরা এসে সেই ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।”

জয়ীতা রায় বলছেন, সেখানে তার পাশেই ছিলেন ডেইলি স্টারের ফটোগ্রাফার অর্কিড চাকমা, আর কিছুটা সামনে ছিলেন মানবজমিনের আবু সুফিয়ান জুয়েল।

যোগাযোগ করা হলে অর্কিড চাকমা বলেন, “তখন আমার আশপাশে আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা ছবিটা তুলেছেন। এটা এআই জেনারেটেড হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

বুধবারের বিক্ষোভে পুলিশের বল প্রয়োগের আরও অনেকগুলো ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলমের শাস্তিও দাবি করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বুধবার রাতে শাহবাগে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন।

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
মঞ্চ ৭১: লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক কার্জনসহ ১৪ জন গ্রেপ্তার
পুলিশের ওপর ৪ দফা হামলা, গাজীপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা
নেতাকর্মীদের লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকার আহ্বান তারেক রহমানের
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে এভার কেয়ারে খালেদা জিয়া
পুলিশ বলছে মুখ চেপে ধরা ছবিটি ‘এআই জেনারেটেড’, মানছেন না সাংবাদিকরা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সাংবাদিকদের হেয় করার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্বারকলিপি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা
দেশের তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার প্রস্তাব অনুমোদন
রোজার আগেই ভোট, ৬০ দিন আগে তফসিল: আখতার আহমেদ
মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন চিত্রনায়িকা শাকিবা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft