ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে রোববারের গণসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অজনপ্রিয় কট্টরপন্থি সরকারের প্রতি গণঅসন্তোষ বেড়েছে। নাগরিকরা আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ থামিয়ে জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। এই বিক্ষোভ উপেক্ষা করে রোববার রাতেই ইসরায়েলের সেনাপ্রধান ইয়াল জামির গাজা দখল পরিকল্পনার খসড়ায় স্বাক্ষর করেছেন। জেরুজালেম পোষ্ট জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী এক লাখ সেনা দিয়ে গাজা শহরকে ঘিরে ফেলা হবে।
সিএনএন জানায়, এই অনুমোদন এমন সময় এলো, যখন ইতোমধ্যে গাজা শহরের ১০ লাখ বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করার কাজ শুরু করেছে দখলদার বাহিনী। গাজা শহরে হামলা অব্যাহত রাখায় মরছে মানুষ, ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর। পালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। আজ মঙ্গলবার পরিকল্পনার খসড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। পরে তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হবে। তেল আবিবের বিক্ষোভ ইঙ্গিত দেয়, নেতানিয়াহুর ওপর চাপ তীব্রতর হচ্ছে।
দ্য ক্রেডল বলছে, দখলদার বাহিনী দুটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তারা একদিকে হামাসকে নির্মূল করতে চায়, অন্যদিকে ৫০ জিম্মির মুক্তিও পেতে চায়। কিন্তু এই দুই লক্ষ্য একই সঙ্গে পূরণ করা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সভাপতি ইয়োহানান প্লেসনার মনে করেন, উভয় লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জনের চেষ্টা করা এখন আর বৈধ নয়। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, প্রতিদিন ত্রাণকেন্দ্র ঘিরে হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে তাঁবুতে ত্রাণবাক্স পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম তীরের মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহার জিইয়ে রেখেছে। এভাবেই ফিলিস্তিনিদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। সংস্থাটি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল মিসর গেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। অতি-ডানপন্থি ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ সিমচা রথম্যানের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে ‘ঘৃণা ও বিভাজন’ ছড়ানোর আশঙ্কায় এই নিষেধাজ্ঞা। সোমবারও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। এদিন হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৭ ফিলিস্তিনি। কয়েক মাসে দুই হাজার ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করা হয়েছে। অনাহারে মারা গেছে ১১২ শিশুসহ ২৬৩ জন। গত ২২ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৬২ হাজার নিহত হয়েছেন।
দখল বাস্তবায়ন হবে যে কৌশলেগাজা শহর দখলে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করছে ইসরায়েলি সামারিক বাহিনী। প্রায় এক লাখ সেনা শহরটি ঘিরে ফেলবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জামির। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা শহরে অবস্থিত হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে। যে কোনো সময় বিমানবাহিনীর হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযানে অগ্রসর হতে পারে তারা। দখল লক্ষ্যকে সামনে রেখে রোববার সেনাপ্রধান গাজা উপত্যকা পরিদর্শন করেছেন। এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইয়াল জামির জোর দেন, যেখানে কখনও অভিযান চালানো হয়নি, সেখানেই এবার হামলা করা হবে। বিদেশ থেকে সৈন্য সংগ্রহের কথাও বিবেচনা করছে তারা। ইসরায়েলের ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (কান) জানিয়েছে, গাজা শহর দখলে প্রায় চার মাস সময় লাগবে। বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করা হবে। চার ধাপে দখল বাস্তবায়ন করা হবে। এক. গাজার দক্ষিণ অংশে তাঁবু, খাদ্য-পানি সরবরাহের স্থাপনা তৈরি ও ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। দুই. সপ্তাহের মধ্যে গাজা শহর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। তিন. বাসিন্দাদের স্থানান্তরের মধ্যে গাজা শহরকে ঘিরে ফেলার জন্য স্থল অভিযান শুরু হবে এবং চার. বিমান হামলার পাশাপাশি গাজা শহরে সেনাবাহিনী প্রবেশ করবে।
আজকালের খবর/ এমকে