আজ ৮১ বছরে পা রাখবেন খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ১০:১৮ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। আজ ১৫ আগস্ট তিনি পা রাখবেন ৮১ বছরে। জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন এবার এমন একসময় উপস্থিত হয়েছে যখন পতিত শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বিনা বিচারে দীর্ঘকাল অসুস্থ অবস্থায় বন্দি জীবন যাপন শেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্ত জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ।১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত বর্ষের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তির ছোট্ট শহরে বেগম জিয়ার জন্ম। পৃথিবীতে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা থেমেছে মাত্র। তখন শরতের স্নিগ্ধ ভোর। নতুন ফুটফুটে শিশু কন্যার আগমনে পরিবারের সবাই আনন্দিত। নাম রাখা হয় ‘শান্তি’। পরে মেঝ বোন সেলিনা ইসলাম পুতুলের মতো শিশুর নাম রাখেন ‘পুতুল’। পরবর্তী পর্যায়ে তার পরিবার দিনাজপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

১৯৬০ সালে তিনি দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তত্কালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৬৫ সালে কলেজে ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়নকালে বেগম খালেদা জিয়া স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের স্বাধিকারকামী মানুষের ওপর নৃশংসরূপে ঝাঁপিয়ে পড়লে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এমনি পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশীদ জাহান হকের বাসায় ২৭ জুন পর্যন্ত দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপন করে থাকেন তিনি।

২ জুলাই পাকিস্তানি সেনারা দুই ছেলেসহ তাকে বন্দি করে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১৯৮১ সালের ৩১ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিছু বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে শাহাদতবরণ করেন। ততদিন অবধি সাধারণ আটপৌরে গৃহবধূই ছিলেন তিনি। শেষ অবধি দলের নেতাকর্মীদের দাবির টানে ঘরের চৌহদ্দি ডিঙ্গিয়ে নামতে হয় তাকে রাজপথে। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। পরের বছরের মার্চে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় তিনি আপসহীন নেত্রী  হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। স্বৈরাচারের পতনের পর নির্বাচনে জনগণ বেছে নেন তাকে। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর গৌরবে অভিষিক্ত হন বেগম জিয়া। তিন বার সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়াই একমাত্র নেত্রী, যিনি অন্তত ১১ বার বন্দিদশা মোকাবিলা করে স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষুকে ভ্রুকুটি করে ষড়যন্ত্র ও কুটিলতার জাল ছিন্ন করে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উজ্জ্বল পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন এবং সফলকাম হয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ওয়ান ইলেভেনের সময়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির সেনানিয়ন্ত্রিত সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোসহ জিয়া পরিবারের ওপর নেমে আসে নির্মম উত্পীড়ন-নির্যাতনের ভয়াবহতা। খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সাব-জেলে নিক্ষেপ করা হয়। দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে তার ওপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করা হয়। তারেক রহমানকে বন্দি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই জনপ্রিয়তম নেতাকে হত্যার জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হয়। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে বন্দি করা হয়। চলে নিপীড়ন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু হয় খালেদা জিয়া-তারেক রহমান ও বিএনপি বিনাশের নীলনকশা।

তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার বিতর্কিত আদালত কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়াকে কারাবন্দি করেন। সেই থেকে শুরু হয় তার জেলজীবন। জেলে তাকে বিনা চিকিত্সায় জীবননাশের উপক্রম করা হয়। প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর দফা-দফায় ছয় মাস করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সাবেক সরকার। তাকে উন্নত চিকিত্সার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অতঃপর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনকাল। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান বেগম খালেদা জিয়া।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি:   
 

আজ ১৫ আগস্ট শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়া ৮১ বছরে পা দিচ্ছেন। বিগত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও জন্মদিনে নেতাকর্মীদের কেক কাটতে নিষেধ করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ শুক্রবার বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সঙ্গে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহিদগণ, ‘৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় বিএনপির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় অথবা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ব্যতিরেকে কেক কাটা কিংবা অন্য কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার জন্য সব নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
সাজেক যাচ্ছিলেন ৬ বন্ধু, ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ২ জনের
উখিয়ায় বিজিবির কাছে জব্দ ৪ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা
ঘনীভূত হচ্ছে লঘুচাপ, ৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস
পূজার ছুটির কারণে পেছাল টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তি
বনানীর সিসা বারে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা
ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষককের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ,পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এপিএস গ্রেপ্তার
মুনতাহার পাশে তারেক রহমান
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft