
রংপুরের পীরগাছায় তিস্তা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে ভাঙনে বিলীন হয়েছে ৪৯টি বসতবাড়ি, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হুমকির মুখে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ। তীব্র ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের হাজারো মানুষ।
তিস্তা নদীর পাড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একদিকে ১ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানোর উদ্যোগ নিলেও অন্যদিকে এলজিইডির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বোল্ডারের মাথায় তীরে বসানো হয়েছে অবৈধ ড্রেজার মেশিন। ওই মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত উত্তোলন করা হচ্ছে নদীর বালু। ফলে ভাঙন ঠেকানোর বদলে আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব এলাকায় তিস্তার করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি। নদীর গা ঘেঁষে বসানো ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন থামছে না। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ কার্যত কোনো কাজে না আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভাঙনের মুখে পড়ে অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু আশপাশে নিরাপদ জায়গার অভাবে নতুন করে বসত গড়ার জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। আতঙ্কে দিন পার করছেন, রাত পার করছেন চোখে ঘুমহীন দুশ্চিন্তায়।
তিস্তাপাড়ের মানুষ বলছেন, ভাঙন ঠেকাতে একপাশে উদ্যোগ আর অন্যপাশে ধ্বংস, এই দ্বৈত অবস্থান না থামলে, আমাদের মতো পরিবারগুলো তিস্তার গর্ভেই বিলীন হয়ে যাবো।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, একদিকে সরকার জিও ব্যাগ দিচ্ছে, আরেকদিকে তাদেরই আরেক সংস্থা এলজিইডি প্রকল্পের জন্য ড্রেজার বসিয়ে নদী খুঁড়ছে। এটা কি মানুষ নিয়ে তামাশা নয়?
ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, গত কয়েকদিনে ৪৯টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ২০ হাজার জিও ব্যাগ দরকার। যা বরাদ্দ হয়েছে, তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব না।
পাওটানা বোল্ডারের মাথায় ভাঙনকবলিত তীর থেকে দিনের পর দিন বালু তোলা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। স্থানীয় আবু সাঈদ মেম্বার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেলের পরামর্শেই বালু উত্তোলন করছি।
এ বিষয়ে ইউএনওকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তায় জবাবে জানান, 'ওসি সাহেবকে মেসেজ করেছি, ব্যবস্থা নিবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. সরফরাজ বান্দা বলেন, এটা আমরা জানি না। তদন্ত করে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিবিশন প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কথা শুনেনা, নির্বাহী অফিসারকে বলতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।
আজকালের খবর/বিএস