
এক বছর পূর্ণ হলো ঐতিহাসিক ৫ই আগস্ট, যেদিন বছর ঘুরে ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গিয়েছিল। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলন ও রক্তাক্ত বুলেটের ভয়ে না থেমে বাংলাদেশ অর্জন করেছে এক নতুন অধ্যায়। এ সময় সারা দেশের ন্যায় ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার কবে যাবি?’এই স্লোগানে সাতক্ষীরার রাজপথও মুখরিত ছিল। তবে এই প্রতিবাদে কেবল ছাত্র-জনতা নয়, বরং পেশাজীবী, সাংবাদিক এমনকি আইনজীবীরাও ছিলেন জুলুমের শিকার।
সাতক্ষীরার সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আরিফুর রহমান আলো ছিলেন তেমনই একজন, যার পথ রুদ্ধ করতে পারেনি স্বৈরতন্ত্র। সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন এসআই ব্রজ কিশোর লাল ’২৪ এর ১৮ জুলাই মামলা দায়ের করেন (জিআর ৩৩৯/২৪), যেখানে ২০ জনকে নামীয় আসামি ও আরও শতাধিককে অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২৮ জুলাই আটকদের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী আলো। সাহসী বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা যারা এই বৈধ আন্দোলনে হাসিনার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, হাসিনার সাথে আপনাদেরও একদিন বিচার হবে।’ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আসামিদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এরপর আইনজীবী আলোকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার সার্কিট হাউজের বাসা থেকে এসআই ব্রজ কিশোর লাল ও সঙ্গীয় ফোর্স তাকে সদর থানায় নিয়ে যান।
তৎকালীন সদর থানার ওসি মহিদুল ইসলাম তার সঙ্গে যে ব্যবহার করেন, তা আজও ভুলতে পারেন না আলো। হুমকি দেন, রাতে অগ্নিবদন হয়ে দেখা হবে। পরদিন আইনজীবী আলোকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়, একটি পুরনো অজ্ঞাতনামা মামলায়।
তখন আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ চলছিল। ৫ আগস্ট দুপুরে কারাগারে প্রচার হতে থাকে, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছেন, সেনাপ্রধান দুপুর ৩টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন’। কিন্তু, কারাগারের টিভি ছিল বিকল। সন্ধ্যায় জেলগেট ভেঙে বহু মানুষ প্রবেশ করে, তালা ভেঙে হাজতী ও কয়েদী আসামিদের বের করে দেয়। এ সময় আলো পালাননি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি লুকিয়ে থাকেন কারাগারের সবজি বাগানে। সঙ্গে ছিলেন মিথ্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত কলারোয়ার যুবদল নেতা আ. মজিদ ও বিএনপি কর্মী কামরুল। তিনজনের সিদ্ধান্ত—তারা পালাবেন না।
রাত ৩টায় কারারক্ষীরা তাদের নিয়ে আবার বিদ্যুৎ সংযোগসহ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন।
এই ঘটনা শুধু প্রতিবাদের নয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও নৈতিকতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। জেল সুপার সঠিক তথ্য না দিতে পারলেও, আলোর নীরব প্রতিরোধে যে আলো ছড়ায়—তা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্থায়ী হয়ে থাকবে।
আজকালের খবর/ওআর