
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে গৃহবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গত সপ্তাহে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার শিকার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস সোমবার (৪ আগস্ট) বলসোনারোর বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বাড়তি শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আদালতের দৃঢ় অবস্থানকেই তুলে ধরেছে। আর এর ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রাজিলের দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বলসোনারোর একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ তার ব্রাসিলিয়ার বাসভবনে গিয়ে তাকে গৃহবন্দী করেছে এবং তার মোবাইল ফোন জব্দ করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসের আদেশে শুধু আইনজীবী ও আদালত অনুমোদিত ব্যক্তিদের ছাড়া বলসোনারোকে মোবাইল ফোন ব্যবহার বা কাউকে সাক্ষাৎ দেওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মোরায়েস বলেন, বলসোনারো তার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছেন এবং মামলাটিতে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভার কাছে ২০২২ সালের নির্বাচনি পরাজয়কে সহিংসভাবে উল্টে দিতে মিত্রদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
আদালতের এই আদেশের ফলে সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়া সাবেক ডানপন্থি এই রাজনীতিক ও আদালতের মধ্যকার টানাপড়েন আরও বাড়ল।
ট্রাম্প এই মামলাকে ‘প্রতিশোধমূলক বা পক্ষপাতদুষ্ট অভিযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এর জবাবে ব্রাজিলীয় পণ্যের উপর বুধবার থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর গৃহবন্দির এই আদেশের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মোরায়েস ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করছেন এবং গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছেন।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করতে পারে।
বলসোনারোর আইনজীবীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট কোনও আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেননি।
গত মাসে রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলসোনারো মোরায়েসকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে অভিহিত করেন এবং তার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে ‘কাপুরুষতা’ বলে আখ্যা দেন।
বলসোনারোর কিছু মিত্র মনে করছেন, ট্রাম্পের কৌশল ব্রাজিলে উলটো ফল দিচ্ছে এবং এতে বলসোনারোর জন্য সমস্যা আরও বাড়ছে এবং লুলার বামপন্থী সরকারের প্রতি জনসমর্থন জোরদার হচ্ছে।
তবে বলসোনারোর সমর্থকদের বিক্ষোভদেখায় যে, মোরায়েসকে নিয়ে ট্রাম্পের রোষ এবং নিষেধাজ্ঞা এই ডানপন্থি সাবেক সেনা কর্মকর্তার রাজনৈতিক ঘাঁটিকে উজ্জীবিত করেছে।
বলসোনারো রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত একটি বিক্ষোভে ভার্চুয়ালভাবে অংশগ্রহণ করেন—তার ছেলে, সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারোর ফোন কলের মাধ্যমে—যা অনেকেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
মোরায়েস তার আদেশে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট একাধিকবার আদালতের আদেশ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আজকালের খবর/বিএস