
সৌদি আরবে এক দিনে আট জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ওই আট জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রবণতা নজিরবিহীন গতিতে বৃদ্ধি করেছে সৌদি আরব। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাদক চোরাচালান দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় উপসাগরীয় দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকরের এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলেছে, শনিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান অঞ্চলে চার সোমালি ও তিন ইথিওপীয় নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে ‘হাশিশ’ চোরাচালানের অভিযোগ ছিল। এছাড়া মাকে হত্যার দায়ে সৌদি এক নাগরিকেরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এসপিএ।
সৌদি আরবের সরকারি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এএফপির পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশটিতে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধের দায়েই ১৫৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরব।
দেশটিতে ২০২৪ সালে রেকর্ড ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা গত বছরের এই রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’র সঙ্গে বর্তমানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনার সংশ্লিষ্টতা দেখছেন। তারা বলেছেন, সেই সময় গ্রেপ্তারকৃতদের দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।
প্রায় তিন বছর মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা স্থগিত রাখার পর ২০২২ সালের শেষ দিকে আবারও সর্বোচ্চ এই সাজা কার্যকর করা শুরু করে সৌদি সরকার।
এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে ২০২২ সালে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই ঊর্ধ্বগতির তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক উপ-পরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, আমরা এক ভয়াবহ প্রবণতা লক্ষ্য করছি, যেখানে বিদেশিদের ক্রমবর্ধমান হারে এমন অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে—যেগুলোর জন্য কখনই মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।
তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মৃত্যুদণ্ড প্রয়োজন এবং সব ধরনের আপিলের সুযোগ শেষেই কেবল এই সাজা কার্যকর করা হয়।
আজকালের খবর/বিএস