
আর কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সাবেক মুখপাত্র ফাতেমা খানম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন।
লাইভে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যাদের সঙ্গে জুলাই আন্দোলন করেছি, তারাই আজ নারীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বয়ান (ন্যারেটিভ) তৈরির চেষ্টা করছেন। নারীদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। এগুলো নেওয়া যায় না।
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন ফাতেমা খানম। ১৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড তিনি লাইভে ছিলেন।
এ সময় ফাতেমা বলেন, চট্টগ্রামের কিছুসংখ্যক মানুষের স্বার্থের কাছে, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কাছে আমাদের রাজনীতি হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছেন আন্দোলনের সম্মুখসারিতে থাকা অনেকে। এখন বলতে গেলে কেউই নেই। এই সবকিছুর জন্য কিছুসংখ্যক ভাই-ব্রাদার দায়ী। তারা কেন্দ্রের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চট্টগ্রামে একটার পর এক কোরাম বানিয়েছেন। এর দায় আপনাদের নিতে হবে।
ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের লড়াই করার কথা ছিল ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে। কিন্তু লড়াইটা করতে হচ্ছে নিজেদের মানুষের সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমার দ্বারা আর রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি বোঝাতে পারব না যে চট্টগ্রামে মেয়েদের নিয়ে কতটা নোংরামি করা হয়, তাদের ব্যক্তিগতভাবে কতটা আক্রমণ করা হয়। সেগুলো কারা করে? আমাদের মানুষই করে। যে ভাই ব্রাদারদের সঙ্গে আমরা উঠি বসি, যাদের সঙ্গে আমরা পথচলার সাহস করি। যে ভাইদের আমরা জীবন বাঁচিয়েছি, সেই ভাইয়েরাই আজ...।
ফাতেমা বলেন, চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খান তালাত মাহমুদ রাফি, রাসেল আহমেদ, রিজাউর রহমান আরও অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাদের যে স্ট্যান্ড নেওয়া উচিত ছিল, তা আপনারা নিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, প্লিজ আপনারা এসব বন্ধ করেন। আপনারা মেয়েদের নিয়ে যে নোংরামি শুরু করেছেন, এসব থামান। আপনারা যারা বড় ভাইয়েরা আছেন, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্লিজ আপনারা এসব থামান। চট্টগ্রামে এত মেয়ে ছিল, আজ সবাই হারিয়ে গেছে। আজকে আমাকে নিয়েও নোংরামি শুরু হয়ে গেছে। শুধু আমাকে মাইনাস করার জন্য বাজে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে।
এই লাইভের পর আজ শনিবার ৪টা ৫৬ মিনিটে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন ফাতেমা খানম। এতে তিনি বলেছেন, রাজনীতির অঙ্গনে কখনো শূন্যস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কেউ একটি পথ থেকে সরে দাঁড়ালে তার স্থানে কেউ না কেউ এসে দাঁড়ায়। আজ আমি ফাতেমা খানম আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছি যে আমি এই রাজনৈতিক পথ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার পরে কেউ না কেউ এই পথ চলবে। তবে চট্টগ্রামের নারী রাজনীতিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ফাতেমা আরও লিখেছেন, এই শহরে যদি কোনো নারী রাজনীতির মাঠে আসতে চান, আমি জানি না, তার ভাগ্যে কী অপেক্ষা করে আছে। আমি ভয় পাই, তাকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়; নিজেদের দলীয় মানুষদের মধ্য থেকেও সহিংসতা, অপমান বা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে। এই অভিজ্ঞতা আমি নিজেও অজস্রবার অনুভব করেছি।
ফাতেমা উল্লেখ করেন, আমি জানি, রাজনীতি কেবল আবেগ দিয়ে চলে না। কিন্তু একজন নারী যখন সমস্ত বাধা, সামাজিক চাপ, নিরাপত্তাহীনতা ও অপমান উপেক্ষা করে রাজনীতির ময়দানে আসে, তখন যদি তার দলীয় ভাইয়েরাই তাকে হেয় করে, নোংরামি করে, তবে সেই জায়গায় তার জন্য রাজনীতি করার পরিবেশ থাকে না। আর এটাই সবচেয়ে বেদনার।
ফাতেমা খানম চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি চট্টগ্রাম নগরের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
আজকালের খবর/বিএস