বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই, পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে: আদালতে বিচারক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০:২৩ এএম
বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার চার শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামসেদ আলম এ আদেশ দেন।

আসামিরা হলেন—আশিকুর রহমান তানভীর (১৯), জেফরী অভিষেক সিকদার (২১), আবু সফিয়ান (২১) ও মো. শাকিল মিয়া (১৯)। শুনানির সময় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের উভয়ের যুক্তি উপস্থাপনের পর বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

শুনানির একপর্যায়ে বিচারক বলেন, বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।

দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চার আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানান। এর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন।

জেফরি অভিষেক শিকদার ও শাকিল মিয়ার পক্ষে আইনজীবী সালাহউদ্দিন খান আদালতে বলেন, ‘আসামিরা অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। সামনে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সচিবালয়ে তারা আবেগে পড়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে হয়তো কিছু অপ্রীতিকর কাজ করে ফেলেছে। মামলার এজাহার ও আটক রাখার আবেদন একই ধরনের। শাকিল মিয়ার পরীক্ষা রয়েছে আগামী রোববার। সে দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থী। ঘটনাস্থলে তারা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। আপনি চাইলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

তানভীরের আইনজীবী বলেন, ‘তানভীর এইচএসসি পরীক্ষার্থী, দনিয়া কলেজে পড়ে।’ এরপর বিচারক জানতে চান, অন্য আসামিদের পক্ষে কেউ আছেন কি না। তখন আবু সুফিয়ানের পক্ষে আইনজীবী তাহমিনা আক্তার লিজা বলেন, ‘সুফিয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাকে কারাগারে পাঠালে তার জীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সে আবেগে সচিবালয়ে গিয়েছিল।’

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আসামিরা সবাই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা কোনো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। সচিবালয়ে ঢুকে তারা প্রথম সারিতে ছিল এবং ভাঙচুর করেছে। তারা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কে ব্যবহার করছে, তা রাষ্ট্রের জানা দরকার। কারা অর্থ জোগান দিচ্ছে, কারা এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত—এসব জানার জন্য তাদের আটক রাখা দরকার। তদন্ত কর্মকর্তা ভবিষ্যতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। জামিন দেওয়া হলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে।’

এরপর বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কে? তুমি সেখানে কেন গিয়েছিলে?’ তখন আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি সচিবালয়ে যাইনি।’

বিচারক বলেন, ‘যদি না যাও, তাহলে তোমাকে কেন ধরা হলো?’ উত্তরে সুফিয়ান জানান, ‘আমি সচিবালয়ের বাইরে ছিলাম, ভেতরে যাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে আমাকে আটক করা হয়। আমি জুলাই আন্দোলনে বিজয় একাত্তর হলে সহ-সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলাম। আমি কখনো ছাত্রলীগ করিনি।’

এরপর বিচারক বলেন, ‘কারা কাকে কোথায় ধরে আনছে? এখন তো বুঝতে পারছি, ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে। যারা জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে, তারাই এখন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। ওই আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের জীবন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।’

বিচারক আরও বলেন, ‘এই দেশের ১২ আনা তো অলরেডি শেষ হয়ে গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তারা আর চাকরি পাবে? এত এত গোল্ডেন এ প্লাস দিয়ে কী হবে? সিডিএমএস ঠিক থাকবে? ওদের জীবন তো শেষ। যেখানে বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবার বক্তব্য দিতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাধা দেন। এতে আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। বিচারক বলেন, ‘আপনারা হট্টগোল করলে আমি কিন্তু নেমে যাব। উনি তো ব্যক্তিগত কাজ করছেন না। রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলছেন। ওনার কথায় আপনারা বাধা দিচ্ছেন কেন? উনি কয় টাকা পান? আপনারা তো আরও বেশি টাকা পান।’

বিচারক বলেন, ‘দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলতে গেলে এখন নেই। রাষ্ট্র না থাকলে সার্টিফিকেট দেবে কে? সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের মাথা। যদি মাথাই আক্রান্ত হয়, তাহলে শরীরের কী দাম থাকবে? আমরা এখন একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। ইউনূস সাহেব চেষ্টা করছেন, ভালো হচ্ছে না মন্দ হচ্ছে—সে বিষয়ে মন্তব্য করবো না। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসন দেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন জামায়াতের শাসনও দেখতে হবে। একটি রাষ্ট্র ঠিক হতে তিনটি প্রজন্ম লাগে। আমাদের প্রজন্ম ভালো রাষ্ট্র দেখবে না, আমাদের সন্তানের প্রজন্ম হয়তো দেখতে পাবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সব কিছু এখনো পচে যায়নি, কিছু রয়ে গেছে। আশা করছি, ধীরে ধীরে হয়তো ভালো কিছু দেখবো।’

সবশেষে বিচারক আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।


আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
রাজধানীতে দিনদুপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউটিন ও চেক বিতরণ
নন্দীগ্রামে কিশোরীর অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ
সাদুল্লাপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারালো শিশু
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিশুশ্রম নিরসনে বেশি প্রাধান্য দিবে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ইবিতে মুজিববাদের নিদর্শন ধ্বংস করতে প্রশাসনকে ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
ব্যাগে কিছুই নাই স্যার, খুলতেই বের হলো ৩০ হাজার ইয়াবা
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের সবশেষ তালিকা দিল সরকার
এনসিপি কোনো চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজের দল নয়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
দেশের স্বার্থে বন্দর নিয়ে প্রোপাগান্ডা যেন না হয়: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft