নেত্রকোনার আটপাড়ায় স্কুলের ভেতরে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলার অভয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম কয়েক দিন আগে যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে শোকজ করেন। এ শোকজপত্র শিক্ষিকা রুবি আক্তার বাড়িতে নিলে তার স্বামী কামাল কাগজটি দেখে বিষয়টি যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টারকে জানান। পরে বুধবার বিকেলে যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য মুন্না খান শাহীন বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে প্রথমে ‘নারীদের ইভটিজিং’ করার অভিযোগ তুলে হেনস্তা করেন।
একপর্যায়ে শাহীন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে পাঞ্জাবির কলার ধরে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে ঘটনার কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী তাসলিমা কোহেন বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই ঘটনার জন্য সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তারকে মারধর করেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করি। সহকারী শিক্ষক রুবি আক্তার নিয়মিত স্কুলে দেরি করে আসছিলেন বলে তাকে নিয়ম মাফিক শোকজ করা হয়। এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপার। বুধবার স্কুল চলাকালীন হঠাৎ হাফিজুর রহমান মিষ্টার ও মুন্না খান শাহীন স্কুলে এসে আমাকে উল্টো ‘নারী শিক্ষকদের ইভটিজিং’ এর মতো মিথ্যা অভিযোগে অপমান করে। আমি যখন বিষয়টি ভিডিও করতে চেয়েছিলাম, তখন তারা আমাকে কলার ধরে বাইরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা মুন্না খান শাহীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অপর অভিযুক্ত যুবদল নেতা হাফিজুর রহমান মিষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, রুবি আক্তার আমার চাচি। প্রধান শিক্ষক বেশ কিছুদিন ধরে তাকে অশালীন প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। আমি এ বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। বরং এর আগেও ওই শিক্ষক অন্য এক নারী সহকর্মীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে হয়রানি করেছিলেন, যা পরে মীমাংসা করে দেওয়া হয়।এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আহসান উল্লাহ মুকুল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় দেখেছি।
মারধরের ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও শিক্ষক রুবিকে শোকজ করা হয়েছিল, সেটি জানি। তবে কোনো নারী শিক্ষক আমার কাছে শ্লীলতাহানির বা কুপ্রস্তাবের লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শুনেছি প্রধান শিক্ষককে দুজন ব্যক্তি মারধর করেছে। এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকালের খবর/ এমকে