স্কুল ভবনে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত, আহত ও নিখোঁজের 'প্রকৃত সংখ্যা' নির্ধারণে একটি কমিটি করেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার এই কমিটি গঠন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফেইসবুক পেইজে জানিয়ে দেওয়া হয়। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর মো. মনিরুজ্জামান মিয়া ওই পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দিয়াবাড়ির স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিদ্যালয় ভবনে ২১ জুলাই (সোমবার) বেলা ১টা ১২ মিনিটে আকস্মিকভাবে বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভূপাতিত হয়।
“ঘটনাস্থলে অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক আহত ও নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত, নিহত, নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও অন্যদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে ঠিকানাসহ তালিকা প্রস্তুত করার জন্য কর্মকর্তা, অনুষদ সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হল।”
কমিটি কাজ শেষ করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানানো হয় ওই ফেইসবুক পোস্টে।
কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন মো. মাসুদ আলম (উপাধ্যক্ষ-প্রশাসন), খাদিজা আক্তার (প্রধান শিক্ষিক), লুৎফুন্নেসা লোপা (কো-অর্ডিনেটর), মনিরুজ্জামান মোল্লা (অভিভাবক), মারুফ বিন জিয়াউর রহমান (শিক্ষার্থী) ও মো. তাসনিম ভূঁইয়া (শিক্ষার্থী)।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। আহত আরো ৬৭ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তবে প্রথম দিন থেকেই সেখানে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। ফেইসবুকে অনেকেই এ সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
দুর্ঘটনায় হতাহতের সঠিক নাম ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণসহ ছয় দাবিতে মঙ্গলবার দিনভর স্কুল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। তারাও হতাহতের সরকারি সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।
‘নিয়ারলি হান্ড্রেড প্লাস ডেথ’, ‘লাশের নিরাপত্তা চাই’, ‘বিচার নয়, লাশের হিসাব চাই’, ‘সার্ভিং মার্ডার, হাইডিং কাউন্টস’ লেখা ফেস্টুন ও পোস্টার দেখা যায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের হাতে।
ওই আন্দোলনের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ কয়েকজন। প্রায় নয় ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশি পাহারায় তারা ক্যাম্পাস ছাড়েন।
শফিকুল আলম বুধবার এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ''স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো থেকে নিয়মিত তথ্য প্রদান করছে এবং সেনাবাহিনীও এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের সংখ্যা গোপন করার কোনো প্রয়োজনে বা অভিপ্রায়ে নেই।''
দীর্ঘদিন সাংবাদিকতায় যুক্ত শফিকুল তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ''২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বহু বড় দুর্যোগ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, বাংলাদেশে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন রাখা কার্যত অসম্ভব।”
আহত ও নিহতদের তথ্য নিয়মিত তুলে ধরতে এবং এই কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দুই উপদেষ্টা কলেজ কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব।
তিনি লিখেছেন, “এই কন্ট্রোল রুমে আপডেট করা হবে এবং তা কলেজের রেজিস্ট্রারের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদেরও এই কার্যক্রমে যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এই কন্ট্রোল রুম আজই পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।''
আজকালের খবর/ এমকে