
সারা দেশে ব্লকেড তুলে নিয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে সকল জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন জারি রাখার অনুরোধ করেছে এনসিপি।
বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টার কিছু আগে ফেসবুক পোস্টে দলটির নেতারা এই অনুরাধ জানান।
বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে লেখেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা নিরাপদ আছেন। সারাদেশের বিক্ষুব্ধ জনতাকে ব্লকেড তুলে নিয়ে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে সকল জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন জারি রাখার অনুরোধ জানানো হলো।’
বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী ফেসবুকে লেখেন, ‘ব্লকেড উঠিয়ে নিন। রাজপথে অবস্থান নিন।’
এদিকে বিকেল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া এনসিপির শীর্ষ নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া প্রহরা ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিরাপদে জেলা ছেড়েছেন।
এর আগে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে করেন এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সংগঠনটি জানায়, গোপালগঞ্জে জুলাইয়ের নেতাদের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ছিল দলটির। গত মঙ্গলবার দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নাম দেয়া হয়।
এই কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জ সদরে আজ সকালে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে হামলা করা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি বহরেও। এ দুই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে জানায় গোপালগঞ্জ পুলিশ।
দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকরা। তারা মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে সরে যান।
এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে ওই সমাবেশ স্থলেই পুলিশি নিরপত্তায় সমাবেশ করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপির নেতাদের গাড়ি বহরে আবারো ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পিছু হটে।
এনসিপির নেতাকর্মীরা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা এনসিপির সমাবেশ মঞ্চ এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে অঅগুন ধরিয়ে দেন। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বাড়তি জনবল নিয়োজিত করা হয়। বিকেলের দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এরপর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একযোগে হামলাকারীদের সরাতে অভিযান শুরু করে।
আজকালের খবর/ওআর