
দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমের পূর্ণতা দিতে ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করেন রিত্তিক বাড়ৈ। ভালো চাকরি না পাওয়ায়, একদিকে স্ত্রীর প্রতারনার শিকার, অন্যদিকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন স্ত্রীর ভাই। দিশেহারা রিত্তিকের পিতা, থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের জোনা গ্রামের দিলিপ কুমার বাড়ৈ এর একমাত্র পুত্র রিত্তিক বাড়ই (২২) এর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই এলাকার বিলজোনা গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডলের একমাত্র কন্যা তমালিকা মন্ডলের (১৯)। দীর্ঘ তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর, একমাত্র ছেলের সুখের কথা ভেবে ছেলের পরিবার মেনে নিলেও ছেলে বেকার হওয়া মেনে নিতে পারেনি মেয়ের পরিবার। সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য মেয়েকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে পরিবারের লোকজন।
উল্লেখ্য, গত ০৫/০৯/২০২৪ তারিখে ফরিদপুর নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ্যাফিডেভিট এর মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দুই। বিবাহের কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। এতে ছেলের পরিবার এ বিয়ে মেনে নিলেও বেকার ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি মেয়ের পরিবার।
স্বামীর সংসার করতে তমালিকা স্বামীকে একটি ভালো চাকরি যোগার করার পরামর্শ দেয় বলে জানায় ভুক্তভোগী রিত্তিক বাড়ৈ।
এ বিষয়ে রিত্তিক আরও জানান, আমি বৌয়ের কথায় একটা চাকরি খোঁজে ঢাকায় চলে যাই। অনেক চেষ্টা করেও সরকারি যোগার করতে না পেরে বৌয়ের কাছে পরামর্শ চায় বেকার রিত্তিক। তখন তমা জানান, সরকারি চাকরি যখন পেলে না তাহলে একটা দোকান অথবা ব্যাবসা করলে হয়তো আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিবে।
ইতিমধ্যে রিত্তিক তার কাকা রুপকুমার বাড়ৈ এর সাথে যোগাযোগ করলে তার কাকা রুপকুমার বাড়ৈ এর পরামর্শে রুপকুমার যে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন, সেখানেই চাকরিতে যোগ দেয় রিত্তিক। কিন্তু তমার পরিবার কোনো মতেই পোশাক কারখানায় কাজ করা ছেলেকে মেনে নিতে পারেনি। অবশেষে রিত্তিকের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করার জন্য মেয়েকে মানসিক চাপ দিতে থাকে তমার বাবা মা এবং ভাইসহ পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে পরিবারের চাপে সপ্তাহ খানেক আগে রিত্তিককে ডিভোর্স দেয় তমালিকা।
ডিভোর্সের পর থেকেই স্বামীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে মেয়েকে আত্মগোপনে পাঠিয়ে দেয় তমার পরিবার।
স্ত্রীর ফোনে বার বার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়ে ঢাকা থেকে মেয়ের বাড়িতে ছুটে আসে রিত্তিক। বৌয়ের খোজে ছুটে যায় শ্বশুরবাড়িতে। নিজের স্ত্রী'র খোঁজ জানতে চাইলে তমার মা বাবা জানান, তাদের মেয়ের কোনো খোজ তারা জানেন না। একপর্যায়ে তারা রিত্তিক'কে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এদিকে তমার বক্তব্য নিতে অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে, টানা তিনদিনের প্রচেষ্টায় কৌশলে তমালিকার কাছে পৌছায় এ প্রতিবেদক। আত্মগোপন এবং ডিভোর্সের কারন জানতে চাইলে একজন হিন্দু মেয়ে হয়েও তমা জানান, আমাকে কোনো কাবিনের টাকা দেওয়া হয়নি, সরকারি চাকরি পাওয়ার কথা বলে আমাকে বিয়ে করা হয়েছে, এখন কেনো পোশাক কারখানায় কাজ করছে। পোশাক কারখানায় চাকরি করা ছেলেদের কি বিয়ে হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তমা জানান, আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না। আমার মা বাবা ভাই আছেন। বাকিটা উনারা জানেন।
এদিকে রিত্তিক জানান, শ্বশুরবাড়ি থেকে অপমাণিত হয়ে ফিরে আসার পথেই তমার ভাই তনময় ঢাকা থেকে রিত্তিকের ফোনে কল দেয়। ফোনে তনময় বলেন, তুই কোন সাহসে আমাদের বাড়িতে গেছিস? আর একবার আমার বোনের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করলে তোকে গোষ্ঠীসহ প্রাণে মেরে ফেলবো। রিত্তিকের কল রেকর্ড থেকে প্রাণনাশের হুমকির প্রমাণ মিলেছে বলে জানান এই প্রতিবেদক।
এ বিষয়ে রিত্তিকের বাবা দিলিপ বাড়ৈ জানান, মেয়ের পরিবার এলাকার প্রভাবশালী হওয়া যেকোন সময় আমার ছেলেকে হত্যা করতে পারে। সেকারনে ছেলে এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি নিজে বাদী হয়ে তমার মা বাবা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাংশা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। বর্তমানে আমার ছেলেসহ আমরা চরম নিরাপত্তাহীতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহ উদ্দিন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আজকালের খবর/বিএস