গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ৭:২৩ পিএম
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটা ওপরে একটা প্রলেপ দেওয়ার পরিবর্তন না, গভীরতমভাবে পরিবর্তন। সেই গভীরতম পরিবর্তন যদি না করি, যেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আজকে আমরা কথা বলছি, আবার ঘুরে ফিরে সে চলে আসবে, যতই আমরা সামাল দেই, যতই সংস্কার করি। আমাদের আরো গভীরের সংস্কার দরকার। এই সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ আয়োজিত জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বছরের পর বছর আয়নাঘরে নির্মম অত্যাচার করেছে। সেখানে ইলেকট্রিক চেয়ার রেখেছে, সেগুলো তো আমাদের দেখারও সুযোগ হয়নি। সেই কাহিনিগুলো মিলে আমাদের এখনকার বাংলাদেশ। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা, এটা থেকে যদি আমরা শিক্ষা পাই, যে দেশ আমরা গড়তে চাই, মুখের ভাষার একতা না, যেটা বললাম, বলে গেলাম ওরকম না। গভীরভাবে শিখে আসবে, আমাদের তরুণরা শিখে আসবে এই দেশ একেবারে নতুন করে বানিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, আমার আবেদন হচ্ছে, আমাদের জাতির ভেতরে এমন কিছু রয়ে গেছে, যতই শাস্তি দেই সেটার বীজ বোধহয় আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। এই বীজ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাই, এটাই আজকে জানার বিষয়, আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়। এটা কয়েকটা কাগজের সংস্কার না। এটা মনের গভীরতম জায়গার সংস্কার। আজকে জুলাইয়ের যে শিক্ষা সেটা হবে কীভাবে নিজে থেকে নতুনভাবে যাতে আবিষ্কার করতে পারি নিজেকে, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা পুনর্জন্ম লাভ করবো। জুলাই আমাদের পুনর্জন্মের মাস, এটা শুধু স্বৈরাচারী মুক্তির মাস না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে, একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ব্যবস্থার চারপাশে একটি বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। লক্ষ্যটা পরিষ্কার, এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেখানে সব বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তিনি বলেন,  অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সূচনালগ্ন থেকেই জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। আমি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও সংহতি এবং এ বছরের মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, ওএইচসিএইচআর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্য, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইস এবং অবশ্যই আমার বন্ধু সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকে তাদের অসাধারণ ও ঐতিহাসিক অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সংস্কার এজেন্ডার পাশাপাশি, আমরা গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের জন্য আইনি জবাবদিহি অনুসরণ করছি। কিন্তু বিচার মানে শুধু শাস্তি নয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও, যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আর কখনো তার নিজের জনগণকে দমন, নীরব বা ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই বিগত বছরের কথা চিন্তা করলে আমরা স্মরণ করি সেই সব মানুষকে, যারা সেই স্বপ্নের পিছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের পথ প্রশস্ত করেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে; যার মূলে রয়েছে আশা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক নবায়ন। আমাদের সবচেয়ে দুঃখময় সময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অব্যাহত অংশীদারত্ব প্রত্যাশা করছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই আমি মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে (ওএইচসিএইচআর) ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতাম যে সত্যের একটি নিরপেক্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্য হিসাব কেবল ন্যায়বিচারের জন্য নয়, প্রতিকারের জন্যও অপরিহার্য। 

তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের হাইকমিশনারের প্রতিবেদনে নৃশংসতার বিস্ময়কর মাত্রা প্রকাশ করা হয়েছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবেদনে সহিংসতাকে পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পদ্ধতিগত, নির্দেশিত এবং সমন্বিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে জরুরি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনসহ আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আমরা হাইকমিশনারের কার্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা কেবল এই নির্যাতনগুলো নথিভুক্ত করেনি, বরং এ ধরনের লঙ্ঘন যাতে আর কখনো না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশ প্রদানের জন্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এই সুপারিশগুলো অন্তঃস্থল থেকে গ্রহণ করেছি- অন্যের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য নয়, বরং নিজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে। দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই আমাদের সরকার ব্যাপক সংস্কারমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করেছি এবং জোরপূর্বক গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সম্মত হয়েছি। এ মাসের শুরুতে আমরা ঢাকায় একটি মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই মিশন সংস্কার উদ্যোগের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।


আজকালের খবর/বিএস 








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ডাকসুতে স্বতন্ত্র প্যানেল দিচ্ছেন উমামা
৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা
পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন
উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধ, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে আইসিসিকে তদন্তের আহ্বান
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিশ্বনাথের সুমেল হত্যা মামলায় যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড
চট্টগ্রাম খুলশীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা, থানায় জিডি
গাজীপুর জেলায় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে
গাজীপুর সিটির হাড়িনাল এলাকায় সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে নগরবাসী
নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে ধরণী বাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft