গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে কুমিল্লায়। টানা দুদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টায় গোমতীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ মিটার, যা বিপদসীমা থেকে মাত্র ৩ মিটার নিচে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গোমতীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। “পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে,” তিনি জানান। নদীর পানি বর্তমানে ৮.৩০ মিটারে অবস্থান করছে, যেখানে বিপদসীমা ১১.৩০ মিটার।
প্রশাসনের সতর্ক বার্তা : কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, গোমতীর আশেপাশের বসবাসকারী মানুষ, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল ও ভাঙনপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধার দল, শুকনো খাবার এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র।
পুরাতন গোমতী: মৃতপ্রায় নদীর কান্না : পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ষাটের দশকে শহর রক্ষায় গোমতীর গতিপথ পরিবর্তন করে প্রায় ৬ কিমি দীর্ঘ অংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই অংশ এখন 'পুরাতন গোমতী' বা 'মরা নদী' নামে পরিচিত, যা অবৈধ দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। সেখানে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি আর ময়লার স্তুপ।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, “২০২১ সালে একনেক সভায় গোমতী উন্নয়ন প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।”
গোমতী শুধু একটি নদী নয়, এটি কুমিল্লা শহরের প্রাণ। তবে আজ সেই প্রাণের অস্তিত্ব হুমকিতে। প্রতি বর্ষায় শহরবাসী আতঙ্কে থাকে—কখন গোমতীর পানি বাঁধ উপচে জীবন-সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। দখলদার উচ্ছেদ, নদী পুনরুদ্ধার এবং নিরবচ্ছিন্ন পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এখনই চাই কার্যকর এবং সাহসী উদ্যোগ। নইলে গোমতীর মৃত্যু হবে আমাদের অবহেলার প্রতিচ্ছবি।
গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি এখন শুধু একটি মৌসুমি খবর নয়—এটি একটি চলমান দুর্যোগ সংকেত। প্রশাসনের সতর্কতা প্রশংসনীয়, তবে জনগণের সচেতনতাও জরুরি। নদীর জীবন্ত ধারা রক্ষা করতে না পারলে একদিন গোমতী কেবল মানচিত্রে থাকবে, বাস্তবে নয়।
আজকালের খবর/ এমকে