চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানা ঘেরাও করে এক ছাত্রদল কর্মীকে ছাড়িয়ে নিল পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। থানা ঘেরাও সংক্রান্ত একটি ভিডিও রোববার  ভাইরাল হয়।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা দর্শনা থানার এসআই অনুজ কুমারকে ক্লোজ করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দর্শনা পৌর ছাত্রদলের সদস্য মানিকের বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে ওই প্রতিবেশী বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় বিকালে দর্শনা থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হলে বাড়ি ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দর্শনা থানার এসআই অনুজ কুমার।

এ সময় মানিককে (২৭) আটক করে দর্শনা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় বিএনপির নেতারা থানায় গিয়ে ছাত্রদল নেতাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর শনিবার রাত ৯টার দিকে দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টার ও মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী মিছিলসহ থানার সামনে জড়ো হন।

এরপরই দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শহীদ তিতুমীরের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আটক ছাত্রদল কর্মী মানিককে (২৭) ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনার পর দর্শনা থানা ঘেরাও করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে আপলোড হয়। থানা ঘেরাওয়ের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই।

ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রায় ৩ শতাধিক মিছিলকারীরা দর্শনা থানার ওসিকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে, বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থানা চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টার তাদেরকে থানায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নেতাকর্মীরা থানা গেটের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র নেতারা থানায় প্রবেশ করে ওসির সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। আলোচনার পর আটককৃত ছাত্রদল কর্মী মানিককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট বলেন, দফায় দফায় দর্শনায় গুঞ্জন ছড়াচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সংগঠিত হচ্ছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে ড. ইউনূসের সরকারবিরোধী মিছিলের নামে সহিংস রূপ নিতে পারে। বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ায় তারা গোপনে মিটিং করছে। ফোনে যোগাযোগ করছে। এই গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি যেন না ঘটে। সে লক্ষ্যে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা চত্বরে যায়। পরে থানা পুলিশকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয় এবং তাদের গ্রেফতারের  দাবি করা হয়।

আটক মানিকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টার বলেন, তিনি ছাত্রদলের সদস্য। পারিবারিক কিছু জটিলতার উভয়পক্ষই থানাতে অভিযোগ করেছিল বলে জেনেছি। এ কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে তারাও মূলত মানিকের আত্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অনুসারী। দীর্ঘদিন ধরে এই পারিবারিক বিরোধ চলছিল। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। আমরা তাকে ছাড়িয়ে নিতে যাইনি বরং চাই প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। তবে আমরা থানায় অনুরোধ করেছি যেন তাকে এজাহারভুক্ত না করা হয় এবং মামলা না দেওয়া হয়। কারণ আমরা মনে করি- তিনি নির্দোষ।

দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসি শহীদ তিতুমীর জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করলেও দর্শনা থানায় প্রবেশ করেনি। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমার আলাপ আলোচনা হয়েছে। এ ঘটনায় দর্শনা থানার এসআই অনুজ কুমারকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস বলেন, থানা ঘেরাও বিষয়টি এমন না। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো গণ্ডগোল না হয় এজন্য দর্শনা থানা পুলিশ একজনকে নিয়ে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করবে মর্মে মুচলেকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তার পক্ষের কয়েকজন প্রতিবাদ করেছে। থানা ঘেরাওয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।


আজকালের খবর/ এমকে