বুধবার ৯ জুলাই ২০২৫
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাহিদার তুলনায় পশু বেশি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ২:০৬ পিএম
আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতেও সীমান্তবর্তী জেলাটিতে খামারিরা গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার সবচেয়ে বেশি গবাদি পশু পালন করেছেন। এসব কোরবানিযোগ্য পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে। আশঙ্কার মধ্যেও খামারিরা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে কোরবানি পশু বিক্রি করে লাভের আশা করছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরীসংখ্যান অনুযায়ী- চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে প্রায় ২ লাখ ৬৯১ গরু লালন-পালন করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ৫২২টি খামারে প্রায় ১৯ হাজারেরও বেশি পশু পালন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। জেলাজুড়ে মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬৬ হাজার পশু বেশি রয়েছে ।

খামারিরা জানান- আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে পশুগুলোর বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন তারা। কোন ধরনের ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ভিটামিন ওষুধ ছাড়াই প্রাকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে পশু লালনপালন করা হচ্ছে। এসব কোরবানিযোগ্য প্রাণি বেচাকেনা করা হবে স্থানীয় পশুর হাটগুলোয়। নায্যদামে বিক্রির মাধ্যমে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার খামারি এসএম কামাল বলেন, এবারের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ছোট বড় সবমিলিয়ে ২০টিরও বেশি পশু প্রস্তুত করেছি। তবে গতবারের তুলনায় এবার পশু পালনে খরচ বেড়েছে। তারপরেও নায্যমূল্যে গরুগুলো বেচতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় পশুর হাটের থেকে অন্য জেলার ব্যাপারীরা আমাদের জেলার গরু খামার থেকেই বেশি কেনেন। বর্তমান সময়ে স্থানীয় হাটগুলোয় অনেকটা আশানুরূপ দামেই কোরবানি পশু বিক্রি হচ্ছে। শেষ কয়েক দিনে জমজমাট পশু বেচাকেনা শুরু হবে।

গৃহীনিরাও প্রস্তুত করেছেন পশু : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামাঞ্চলের প্রায় বাড়িতে গৃহীনিরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত করেছেন। প্রকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে এসব গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পশু নিজ বাড়ির জন্য বেশি প্রস্তুত করেন গৃহীনিরা। তবে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশুগুলো বাজারে বিক্রি করে থাকেন তারা।

গৃহিনীরা জানান- গ্রামের প্রায় বাড়িতে কমবেশি গরু-ছাগল পালন করা হয়। তবে গরুগুলো কোরবানির জন্য বিক্রি করে দেয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে পালন করা ছাগল নিজেদের কোরাবানির জন্য রেখে দেয়া হয়। এসব পশু ছোট হওয়ায় তাদের পালনে খুব একটা ঝুটঝামেলা পোহাতে হয় না।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তাহেরা বেগম বলেন, বাড়িতে ছাগল পালন করার শখ থেকেই একটি ছাগি কিনেছিলাম। এরপরে একটি ছাগলছানা জন্ম দেয় পশুটি। সেটিকে কোরবানির জন্য লালনপালন করেছি। আর্থিক সঙ্কটে গরু কোরবানি দিতে না পারলেও নিজের বাড়িতে পোষা ছাগল কোরবানি দেয়া যাবে। তাহেরা বেগমের মতো আরও অনেক গৃহীনির একই বক্তব্য।

ন্যায্য দাম পেলে ঘুরে দাঁড়াবেন খামারি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে নানা সমস্যার কারণে গরুর খামারি সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তবে এবার জেলা প্রাণিসম্পদের এক পরীসংখ্যানে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় পাঁচ শতাধিক খামারি বেড়েছে। তারা প্রত্যেকে দেশি-বিদেশি পশু পালন করে লাভের আশা করছেন। যদিও বরাবরই আলোচনায় থাকে নায্যমূল্য।

খামারি আব্দুল হান্নান বলেন, গত বছরের তুলনায় জেলায় খামারির সংখ্যা বেড়েছে। যার কারণে পালিত পশুর সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। শেষ পর্যন্ত ন্যায্যমূল্য পেলে পশুপালনে সুদিন ফিরে আসবে। একই সঙ্গে বেকার যুবকরাও এই খাতে যুক্ত হবেন। এলাকায় বেকারত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় উদ্বৃত্ত পশুগুলো পাঠানো সম্ভব হবে।
 
শঙ্কায় খামারিরা : চাঁপাইনবাগঞ্জের পশু পালনকারিরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তখনই তারা আশঙ্কায় দিন পার করছেন। পশুর হাটগুলোয় ভারতীয় গরুর আমদানি হলে লোকসানে পড়বেন তারা। এ জন্য চোরাচালানে ভারতীয় গরু কোনভাবেই বাজারে আমদানি না হয় সেই দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে জেলার খামারিদের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা প্রায় গুড়ে বালি হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক জানান, এই খাতকে ধরে রাখতে ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। এছাড়া খামার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও গো-খাদ্যের দাম কমানোসহ ভর্তুকি দিলে খামারিরা বিগত দিনের সব সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

এদিকে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং নায্যমূল্য নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা স্বীকার করেছেন চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ড. গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রত্যাশা- সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি থাকায় প্রতিবেশি দেশ থেকে গরু না আসায় দেশি গরুর খামারিরা এবার ভালো দাম পাবেন। এছাড়া উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে এবারও চাহিদার বেশি পশু চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি এবার যারা ভোক্তা তারা যেমন নায্যমূল্যে গরু কিনতে পারবেন। খামারিরা তাদের উৎপাদিত পশু নায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।


আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
দেশবন্ধু সুগার মিলসে উৎপাদন শুরু
দুর্যোগের আগাম বার্তা জানাচ্ছে লাইট হাউজ
পানি নিষ্কাশনের অভাবে আবারও তলিয়ে গেছে ফেনী
জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৬ সাংবাদিকদের স্বরণে স্মরণ সভা
জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৬ সাংবাদিকদের স্বরণে স্মরণ সভা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বিটিভিকে চাঙা করতে কমছে বিজ্ঞাপনের মূল্যহার
দেবীদ্বারে তরুণদের প্রথম ভোট হবে ধানের শীষে
নম্বরপত্র ও সার্টিফিকেট প্রদানে জটিলতা: ইবি ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিবাদ
নাসিরনগরে জুলাই যোদ্ধাদের মানববন্ধন
‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে’
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft