
গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এর ৬০তম জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’পালিত হয়েছে।
‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয় ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করেন।
বশেমুরকৃবি জানায়, ১৯৬৪ সালের এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু পরিবারে কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় লেখক, ব্রিটিশ দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে প্রিয় কনিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখেন রাসেল। শেখ রাসেল জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আনন্দ র্যালি, শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল।
সকালে একটি আনন্দ র্যালি ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন করা হয়। শ্রদ্ধার্ঘ শেষে পরিচালক (ছাত্র-কল্যাণ) প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ট্রেজারার প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, শৈশব থেকেই দূরন্ত, প্রাণবন্ত শেখ রাসেল ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের অতি আদরের নয়নমনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রু খুনি ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি দশ বছরের ছোট্ট শিশু রাসেল। মৃত্যুকালে শেখ রাসেল রাজধানীর ইউনির্ভাসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৬০ বছরের একজন পরিপূর্ণ মানবিক মানুষ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতই পাশে থেকে দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দিতেন এবং দেশকে সোনার বাংলা রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতেন নিঃসন্দেহে। তিনি শেখ রাসেল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন। বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দিবসের সকল কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, প্রভোস্ট, ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অপর দিকে একই দিনে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরাম এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি মালঞ্চ এর উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ পুত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন পালন করা হয়। শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বাউবি’র শেখ রাসেল চত্বরে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপাচার্য বলেন দার্শনিক নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বার্ট্রান্ড রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখেন শেখ রাসেল। আজ শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তিনিও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মতো বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করতেন, বিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা হতেন। শেখ রাসেল জাস্ট্রিন ট্রুডোর মত নেতৃত্ব দিতেন বাবার উত্তরসূরী হিসেবে। তিনি বাবার দেয়া নামের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতেন স্বীয় জ্ঞান ও মেধা দিয়ে। তিনি পিতা-মাতা, ভাই, বোন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে মাত্র দশ বছরের জীবন কাটিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্খা সব কিছুকে ’৭৫ এর খুনীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শেখ রাসেলের ওপর এই নির্মমতাকে উপাচার্য স্মরণকালের একটি বড় কলঙ্কিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার শেখ রাসেল দিবসের স্মারক হিসেবে বাউবি’র শেখ রাসেল চত্বরে একটি শিউলি ফুলের চারা রোপন করেন। এ সময় ট্রেজারার অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল, রেজিস্ট্রার ড. মহা: শফিকুল আলম, ডিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এবং বাউবি’র শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরাম, ডিরেক্টরস কাউন্সিল এর নেতৃবৃন্দ, বাউবি’র ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রাসেল এর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও দিবস উপলক্ষ্যে বাউবি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক ফোরাম এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি মালঞ্চ এর উদ্যোগে এবং বাউবি ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে একই দিনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেল এর ৬০ তম জন্মবার্ষিকী এবং শেখ রাসেল দিবস ২০২৩ পালিত হয়েছে। শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে তাঁর জন্মদিনকে ”শেখ রাসেল দিবস” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের শেখ রাসেল দিবস ২০২৩ পালনের প্রতিপাদ্য ”শেখ রাসেল দীপÍময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়।
দিবসটি পালন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও গার্ড অব অনার প্রদান, পুষ্পস্তবক অর্পণ, বেলুন উড়িয়ে দিনের কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন, আনন্দ র্যালি, কেক কাটা, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও শেখ রাসেল এর জীবনভিত্তিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা।
সকালে বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার অন্যান্য পরিচালকবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচির সূচনা করেন। এ সময় আনসার সদস্যদের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর বারি’র প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বারি’র মহাপরিচালক। পরে বারি’র মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ইনস্টিটিউটের সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীবৃন্দকে সাথে নিয়ে একটি আনন্দ র্যালি বের করা হয়। আনন্দ র্যালিটি বারি’র প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বারি’র প্রধান কার্যালয়ের সামনে শহীদ শেখ রাসেল এর জন্মবার্ষিকী এবং শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এরপর আনন্দ শিশু কানন ও বিএআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও শেখ রাসেল এর জীবনভিত্তিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. ফেরদৌসী ইসলাম, পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ, পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. দিলোয়ার আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. তারিকুল ইসলাম, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং) ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষি অর্থনীতি বিভাগ) ড. মো. আব্দুর রশীদ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সরেজমিন গবেষণা বিভাগ) ড. মো. মাজহারুল আনোয়ার, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পোস্ট হারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগ) মো. হাফিজুল হক খান, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ) ড. হাবিব মোহাম্মদ নাসের, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) (সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ) ড. সুজিৎ কুমার বিশ্বাস, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) (এফএমপিই বিভাগ) ড. মো. নুরুল আমিন , বারি বিজ্ঞানী সমিতি (বারিসা), বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বারি শাখা, বারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি (বারিকা), বারি চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি (বারিচা), বারি শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউটের সকল স্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শ্রমিক, শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বাদ যোহর বারি জামে মসজিদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেল এর জন্মবার্ষিকী এবং শেখ রাসেল দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
আজকালের খবর/বিএস