প্রকাশ: শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৫ পিএম
সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে, প্রত্যেক গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থার শুরুতেই এটি জানতে চান। প্রকৃতপক্ষে, যেসব দম্পতি প্রথমবার মা-বাবা হতে যাচ্ছেন তাদের কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হলো গর্ভস্থ বাচ্চার লিঙ্গ। আলট্রাসনোগ্রাফি আবিষ্কারের আগে অন্তঃসত্ত্বার বিভিন্ন লক্ষণ দেখে তা বুঝতে চেষ্টা করতেন গ্রাম-বাংলার নারীরা।
সন্তানের লিঙ্গ জানতে কিছু আচার-অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হতো।
অন্তঃসত্ত্বার স্তনবৃন্ত কালো হয়ে গেলে ছেলে হবে বলে ধরে নেওয়া হতো, আর বাদামি হলে মেয়ে সন্তান। বাঙালির মধ্যে এ ধারণা এসেছে ‘ওঁরাও’ ও ‘বাইগা’ আদিবাসীদের কাছ থেকে। ভারতের ‘চামার’ জাতির বিশ্বাস, অন্তঃসত্ত্বা ডান পাশ ফিরে ঘুমালে ছেলে সন্তান জন্মাবে, না হয় মেয়ে। বাঙালিরাও তা বিশ্বাস করত।
স্বপ্নে চাঁদ দেখলে মেয়ে হবে, সূর্য দেখলে ছেলে। চিতল মাছের ডিম, শিং মাছ, সাপ, হাড়গিলা, কবুতর, পেয়ারা—এসব স্বপ্নে দেখা মানেই ছেলেসন্তান হওয়ার ইঙ্গিত। বেলে মাছ, পুঁটি মাছ ও আংটি দেখলে হবে মেয়েসন্তান। বাঙালি লোকাচারে আরও মানা হতো—স্বপ্নে ছেলে ভূমিষ্ঠ হতে দেখলে জন্মাবে মেয়ে। মেয়ে দেখলে হবে ছেলে।
অনুষ্ঠানে সেমাই কিংবা পায়েস রেঁধে সন্তানের লিঙ্গ জানার চেষ্টা করা হতো। রান্না করা পায়েস বা সেমাই ঠান্ডা হলে এর ওপর ঘন আস্তর পড়ত। ফাটা আস্তর মেয়ে হওয়ার লক্ষণ। না ফাটলে ছেলে। তা ছাড়া গোল ও লম্বা পিঠা তৈরি করেও ঢেকে রাখা হতো। অন্তঃসত্ত্বা ঢাকনা তুলে যদি গোল পিঠা দেখতেন, তবে গর্ভে মেয়েসন্তান আছে বলে ভাবা হতো। কোথাও কোথাও ভাজানো হতো খই। তা লম্বা হয়ে ফুটলে ছেলেসন্তান আশা করতেন আত্মীয়রা।
এরপর ১৯৫৮ সালে গাইনি বিভাগে যুক্ত হয় আল্ট্রাসাউন্ড। এ ব্যবস্থায় গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পর থেকে সন্তানের লিঙ্গ জানা যায়। প্রসূতির রক্তচাপ মেপেও লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব বলে মত দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডার গবেষক রবি রত্নাকরণ। তার মতে, প্রসবের আগে রক্তচাপ কম থাকলে তা কন্যাসন্তানের ইঙ্গিত।আধুনিককালে ছেলেমেয়ের সামাজিক বৈষম্য কমে যাওয়ায় কমে গেছে সন্তানের লিঙ্গ আগাম জানার কৌতূহল। তবুও অনেকের মধ্যেই রয়ে গেছে অতীতের বাঙালি লোকাচার। সেগুলো মেনে এখনো কেউ কেউ অনাগত সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে আন্দাজ করেন।
আজকালের খবর/ওআর