
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক দাবি করে মো. আব্দুল হান্নান নামে একজনকে গ্রেপ্তার ও আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গত রবিবার আদালতে রিমান্ড শুনানিতে হান্নান বলেছিলেন, আটকের পর তিনি র্যাবকে বলেছিলেন, তাকে শোরুমে (বিক্রয়কেন্দ্র) নিয়ে যেতে। তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। পরে পুলিশকেও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ তার কথা শোনেনি।
মোটরসাইকেলটি তার নয় দাবি করে হান্নান সেদিন বলেছিলেন, মোটরসাইকেলটি তিনি মিরপুর মাজার রোডের ওই শোরুম থেকে কিনেছিলেন। কিন্তু হাতে সমস্যা হওয়ায় তিনি চালাতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে সেটি ওই শোরুমে বিক্রি করে দেন। দুই মাস আগে মালিকানা বদলের জন্য শোরুম থেকে ফোন করা হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।
আজ এই মামলায় মো. কবির নামে গ্রেপ্তার একজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে ওই মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কবিরকে ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলছে পুলিশ।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি ইটভাটা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে র্যাব বলেছিলেন, কবির ৫ ডিসেম্বর ফয়সল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আসতে।
বিকেলে এই মামলায় কবিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ। তিনি আদালতে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আসামি কবির ও ফয়সলসহ অন্য আসামিরা ওসমান হাদির কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। তা ছাড়া হান্নানের বিক্রি করা মোটরসাইকেলের মালিক কবির।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন বলেন, কবির ঢাকার আদাবর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। মোটরসাইকেলযোগে গিয়ে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। তার জীবন এখনো সংকটাপন্ন। এ ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সলসহ কবির হাদির কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে তার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। মোটরসাইকেলের মালিক কবির। এ হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আর কে কে জড়িত, সেটা জানার জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
আদালতে শুনানিতে কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। বিচারক কবিরের উদ্দেশে বলেন, আপনার কিছু বলার আছে?’ তখন কবির বলেন, স্যার, আমি ১৮ দিন আগে ওনার (ফয়সল করিম) গাড়ি (মোটরসাইকেলে ট্রিপ) ও পাঠাও চালাইতাম। উনি আমাকে ফোন দিলে আমি যেতাম। বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। ১৮ দিন আগে ফয়সল আমাকে বলেছে, আমি হাদির সঙ্গে ব্যবসা করি, তার নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করি। তার কাছে যাব। আমি যেতে চাইনি, এরপরও উনি আমাকে নিয়ে গেছেন। এই আমার অপরাধ স্যার।
এ পর্যায়ে বিচারক প্রশ্ন করেন, মোটরসাইকেলের মালিক কে? জবাবে কবির বলেন, মোটরসাইকেলটা আমার এক বন্ধুর। আমি গাড়ি (মোটরসাইকেল) কিনতে গেছি। সে–ও গাড়ি কিনতে গেছে। সে আমার আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে গাড়ি কিনছে।’ বিচারক বলেন, তার নাম কী? কবির বলেন, স্যার, মাইনুদ্দিন ইসলাম শুভ।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ওই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ওসমান হাদিকে হুলি করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার মতিঝিল এলাকায় প্রচার চালিয়ে ফেরার পথে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে মোটরসাইকেল থেকে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে গতকাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. কবির। গত রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকায় একটি ইটভাটার ছনের ঘর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল সোমবার রাতে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সে সময় র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কবির রাজধানীর আদাবর থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি আদাবরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদর থানার বড় বিঘাই গ্রামে। ফয়সল করিমের গ্রামের বাড়িও পটুয়াখালীতে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী গতকাল রাতে বলেছিলেন, কবির ৫ ডিসেম্বর ফয়সল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি স্বীকার করেননি। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। ওই ফুটেজ দেখানোর পর কবির স্বীকার করেন, ফয়সল করিম ও তিনি সেদিন ওই প্রতিষ্ঠান দেখে আসতে সেখানে গিয়েছিলেন।
আজকালের খবর/বিএস