বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছুটছেন অসহায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে
সবজি বিক্রেতা থেকে সফল উদ্দোক্তা
হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:০৬ পিএম
জীবনে সফল হতে চাইলে কেবল মনে সাহস আর আত্মবিশ্বাস থাকাই যে যথেষ্ট সেটাই করে দেখিয়েছেন তুরস্ক প্রবাসী শিহাব আহমেদ। পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং উদ্দোক্তা। কিন্তু সফলতার এ পথের শুরুটা কোনোভাবেই সহজ ছিলো না, ছিলো ভিষণ সংগ্রামের। অভাব অনাটনের বেড়াজালে পড়ে পাড়ি জমাতে হয়েছিল বিদেশে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি শিহাব আহমেদকে। অদম্য চেষ্টা আর সংগ্রাম তাকে পৌঁছে দিয়েছে সফলতার উচ্চ শৃঙ্গে।

বিদেশে থাকলেও দেশের প্রতি তার ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না। বিদেশে থেকে কাজের ফাকে চিন্তা করতেন কয়েক বছর আগের দৃশ্যগুলো। সেই ভাবা থেকে দেশে ফেরা। ছোট বেলা থেকে প্রবল ইচ্ছে ছিলো অসহায় মানুষদের পাশে দাড়ানোর। সেই ইচ্ছে থেকেই বাড়ি ফিরে ও কাজের ফাঁকে ছুটে চলতেন অসহায় মানুষের দ্বারে। কখনো কখনো অর্থ খাবার ও নতুন পোশাক পৌঁছে দিতেন ছিন্নমূল মানুষের কাছে, আবার কখনো অভাবীদের চিকিৎসা খরচ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতেন তিনি। স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছেন অনেকের। আবার কখনও অভাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচও জুগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও যে কোনো মানবিক বিপর্যয়ে বরাবরই ছুটে যান শিহাব আহমেদ। তাই স্থানীয়দের কাছে ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেও পরিচিত তিনি।

শিহাব আহমেদ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নে ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের ছেলে। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে সপ্তম শিহাব। তার দুই বছর বয়সে মা না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। শিশুকালে মাকে হারানোয় নানি ও অন্য আত্মীয়রা তাকে লালন পালন করেন। এরপর সবজি বিক্রি, ট্রাকের হেলপার (সহকারী) ও রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া করে ২০১৪ সালে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (গোল্ডেন এ প্লাস) পান। মানুষের সংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট এবং তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখতে দেখতে কেটেছে তার শৈশব। সেই বাস্তবতা থেকে নিজেকে গড়ে তুলার প্রত্যয়ে শুরু করেন পথচলা। যাতে একদিন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। দেশের বাইরে বহু বছর কাটিয়ে শিক্ষা, ব্যবসা ও অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত হয়ে ফিরে আসেন দেশে। উন্নত বিশ্বের জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তি দেখে উপলব্ধি করেন গ্রাম এবং দেশের মানুষগুলোর পাশে দাড়াবেন।

মানবতার ফেরিওয়ালা হওয়ার পিছনের গল্প জানতে চাইলে শিহাব আহমেদ বলেন, ব্যবসার মুনাফা আমার কাছে শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি হাতিয়ার। যেহেতু আমি জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে আমাকে অনেক পেশায় কাজ করতে হয়েছে। পাশাপাশি পড়ালেখার খরচ চালাতে বড়খাতা বাজারে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবজি বিক্রি করতাম। তাই সমাজসেবায় যুক্ত হওয়ার পেছনে মূল অনুপ্রেরণা এসেছে মানুষের কষ্ট ও দুর্দশা কাছ থেকে অবলোকন করে। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি শিক্ষার অভাবে প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে, চিকিৎসার অভাবে প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবাকে জীবনের অংশ করব। যখন মানুষের জন্য কিছু করতে পারি তখন আমার মাঝে আমি আলাদা একটা আনন্দ খুঁজে পাই। যখন কোনো অসহায়, দুস্থ মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে তার মুখে হাসি ফোটাতে পারি তখন হৃদয় যে প্রশান্তিতে ভরে যায় তা বলে বোঝানো যাবে নাহ। মনে হয় হাসিটা আমার মায়ের মুখে দেখছি। মাকে আমি ছােট বেলায় হারিয়েছি। তাকে আমি অসহায় মানুষদের মাঝে দেখতে পাই। আমি যখন তাদের পাশে দাড়াই তখন আমার মায়ের কথা মনে পড়ে।

সামাজিক কার্যক্রম ও অবদানের কথা তুলে ধরে শিহাব আহমেদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাই সর্বদা মত ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ না করে দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের জন‍্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। এ পর্যন্ত হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের লক্ষাধিক পরিবার ও সমাজের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
২৫০০০ এর বেশি পরিবারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি। ১০০০ এর অধিক মসজিদ-মাদরাসা-এতিমখানায় ওযুখানা স্থাপন করেছি, ১৫টি মসজিদ-মাদরাসা-এতিমখানা নির্মাণ করেছি, ২০০০ এর অধিক গরু ছাগল কোরবানি করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অবদান রেখেছি। করোনাকালীন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০০০ এর অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি, ১০টি পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, ১০০ এর অধিক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে চলাচলের জন‍্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে ক্ষুদ্র পরিসরে ব‍্যবসা শুরু করতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। শত শত অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছি। তিন লক্ষাধিক মানুষের জন্য একবেলা গরম খাবার ও ইফতার বিতরণ করেছি।

কিনি বলেন, দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১৮৯টি ওয়ার্ডে ২১০টি “শিহাব আহমেদ শিশু বিকাশ একাডেমি” করে দিয়েছি। আমার স্বপ্ন দুই উপজেলার প্রতিটি সন্তানের হাত ধরব এবং একটি প্রজন্মকে আগামীর হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম এবং সমগ্র বাংলাদেশের জন‍্য গড়ে তুলব।

অবদানের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উপজেলার শতাধিক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করছি। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমার স্বপ্ন, এই এলাকার কোনো প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যেন অর্থাভাবে থেমে না যায়। তবে এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার শর্ত একটি আমি যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে আপনার হাত ধরতেছি ঠিক একইভাবে আপনিও শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে ফিরে হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের একজন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর হাত ধরবেন। অসহায় ও দরিদ্র মানুষের বিপদে ছুটে যাবেন।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সম্ভবত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে ইসি: প্রেস সচিব
বদলগাছীতে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে চুরি, রেহাই পায়নি মুক্তিযোদ্ধা ব‍্যবসায়ীর বাড়িও
যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হতদরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক কারও বিরুদ্ধে নয়, কারও নির্দেশনায়ও চলে না: চীনা রাষ্ট্রদূত
ধানুশ-রজনীকান্তের বাড়িতে বোমা হামলার হুমকি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার
শিক্ষার্থীদের মারধরের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি ড্যাফোডিলের উপাচার্যের
গাজায় ৩৬ এতিমের দায়িত্ব নিলেন এক দম্পতি
হাসপাতালে ভর্তি অভিনেতা হাসান মাসুদ
গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা’ চালাতে নেতানিয়াহুর নির্দেশ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft