মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫
যেভাবে প্রতীক হয়ে উঠলো ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লা-লাঙ্গল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
কোন আইনে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ বাদ দেওয়া হলো, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে এমন প্রশ্ন রেখেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আবার শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয় বলেও সাফ জানিয়েছে ইসি। এনসিপি ও ইসির প্রতীক নিয়ে এমন তুলকালামে আলোচনায় আসছে ধানের শীষ, স্থগিত নৌকা প্রতীক কিংবা দাঁড়িপাল্লা কীভাবে নির্বাচনি প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থিরা এরই মধ্যে নিজ নিজ দলের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নিজস্ব প্রতীকের সমর্থনে মিছিল-মিটিং করছেন তারা।

বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো যখন ধানের শীষ বা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে মাঠের রাজনীতিতে সরব, তখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নৌকা ভোটের মাঠে নেই। আর রাজনীতির নানা দোলাচলে ঝুলে আছে লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনি ভবিষ্যৎ।

বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাস বলছে, ধানের শীষ, নৌকা, লাঙ্গল কিংবা দাঁড়িপাল্লার মতো প্রতীকগুলো ভোটের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে রয়ে গেছে বছরের পর বছর ধরে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্যালট পেপারে প্রার্থীর নামের পাশে থাকে প্রতীক। মানুষ প্রতীক দেখে ভোট দেয়। যে কারণে প্রতীক যদি পরিচিত হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে সেই প্রতীক বা দলের জনপ্রিয়তাও থাকে আলাদা। যে কারণে নির্বাচনের আগে নিজ নিজ দলের প্রতীকের পক্ষে গান-কবিতা কিংবা স্লোগান তৈরি করে নানা ধরনের প্রচারণাও চালিয়ে থাকেন প্রার্থিরা।

বর্তমানে নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগসহ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। অর্ধশত রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত থাকলেও অনেক দলের প্রতীক সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দল যে প্রতীকে নির্বাচন করে আসছে, তার অনেকগুলোই শুরুতে নিজ দলের প্রতীক ছিল না।

ধানের শীষ যেভাবে বিএনপির প্রতীক

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক পথ-মতের অনুসারীদের এক প্ল্যাটফর্মে এনে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দলটি প্রথম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে ১৯৭৯ সালে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধানের শীষ বিএনপির আগেও ব্যবহার হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। ধানের শীষকে প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ।

পরবর্তী সময় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপের বড় একটি অংশের যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৭৮ সালে বিএনপির জন্ম হয়। এই অংশটির নেতৃত্বে ছিলেন মশিউর রহমান, তিনি যাদু মিয়া নামে পরিচিত।

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ভাসানী ন্যাপের বড় অংশ যখন মশিউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে মিশে যায়, তখন বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক নেয়। যেহেতু যাদু মিয়ার অংশই বড় ছিল, তাই তারাই ধানের শীষ প্রতীকসহ বিএনপিতে একীভূত হয়। তখন থেকেই বিএনপির প্রতীক হয় ধানের শীষ। এরপর থেকে বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হিসেবে ধানের শীষে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু বিএনপি নয় নব্বই পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় আগে থেকেই যেসব দল যে যে প্রতীকে নির্বাচন করতো-পরবর্তীতে তারা সেই প্রতীক ব্যবহার করে আসছে।

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা জেসমিন টুলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ২০০১ সালের আগে একটা নিয়ম ছিল নির্বাচনের আগে প্রতীক বরাদ্দের দিনে ইসি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে তারপর প্রতীক বরাদ্দ দিতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দলগুলো আগে যে প্রতীকে নির্বাচন করতো সেই প্রতীকই তাদের বরাদ্দ দেওয়া হতো।তিনি জানান, পরবর্তী সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. এটিএম শামছুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। তখন বিএনপিকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, কোনো কোনো স্থানীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থীরা ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

নৌকাও ছিল না কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে নৌকা মার্কা অনেকটাই ঐতিহাসিক। শুধু বাংলাদেশে নয়, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ নির্বাচনে প্রধান দুটি প্রতিদ্বন্দ্বি দল ছিল যুক্তফ্রন্ট এবং মুসলিম লীগ। সে সময় মুসলিম লীগ হারিকেন এবং যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতো।

যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী মুসলিম লীগ হওয়ায় যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়ার পর নৌকা প্রতীকটিও চলে আসে আওয়ামী লীগের কাছে। ১৯৫৭ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ। তবে নৌকা প্রতীক পেলেও এই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়।

মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৯৭০ সালেই প্রথম নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগের শরীকরাও আর এই নৌকা প্রতীক দাবি না করায় পরবর্তীতে নৌকাই হয়ে যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক।

নৌকাকে কেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিল? এমন প্রশ্নে আহমদ বলছিলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশে তখন নৌকা ছিল গণ-মানুষের কাছে খুব পরিচিত প্রতীক। যে কারণে নৌকা মার্কায় বিশেষ ঝোঁকও ছিল আওয়ামী লীগের। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এই নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নেয়।

২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপরই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক নৌকা প্রতীকও স্থগিত করে। যে কারণে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে যে প্রতীক তালিকা রয়েছে, সেখানেও স্থগিত রাখা হয়েছে নৌকা প্রতীক।
লাঙ্গলের মালিকানারও পরিবর্তন

নৌকা কিংবা ধানের শীষের মতোই বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক লাঙ্গল। বর্তমানে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে লাঙ্গল মার্কা।

লাঙ্গল মার্কাটি বর্তমানে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক হিসেবে থাকলেও এটি প্রথম দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয় অবিভক্ত ভারত বর্ষে। তখন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙ্গল। সেখান থেকে লাঙ্গলের মালিকানা যায় আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগের কাছে।

গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমানের দল লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আতাউর রহমান এই লাঙ্গল মার্কাতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পাশাপাশি বিলুপ্তি ঘটে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের। পরবর্তী সময়ে লাঙ্গল প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আতাউর রহমান খান এক সময়ে এরশাদের সঙ্গে জোটে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর পরবর্তীতে সেটা জাতীয় পার্টির প্রতীকও হয়ে গিয়েছিল।

নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশে আটটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়। কিন্তু এসব নির্বাচনে কখনো ক্ষমতায় যেতে পারেনি এরশাদের হাতে গড়া এই দলটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতা ছাড়ার পর গত প্রায় চার দশকে বেশ কয়েক দফায় জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখে পড়লেও দলীয় প্রতীক কখনো হাতছাড়া করেনি এরশাদের অংশ।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি আরেক দফায় ভেঙেছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক হিসেবে লাঙ্গল চেয়েছে।

যদিও নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় এখন পর্যন্ত লাঙ্গল প্রতীক রয়েছে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের কাছে।

দাঁড়িপাল্লার অবস্থানও পাল্টায়

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে জামায়াত ইসলামীর সাফল্য খুব একটা না থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে দলটি নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের কখনো নিবন্ধন বাতিল, কখনো নিষিদ্ধ কখনো বা হারিয়েছে নিজস্ব দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা কিংবা লাঙ্গল প্রতীকের সঙ্গে জামায়াতও অংশ নিয়েছিল দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে জামায়াত দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে। ওই বছর জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দের জন্য আবেদন করে নির্বাচন কমিশনে। পরে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা পায় দলটি। এরপরে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আরও পাঁচটি সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন যখন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চালু করে তখনও চাহিদা অনুযায়ী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হয় জামায়াত ইসলামীকে।

হাইকোর্টে এক রিটের আদেশে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, জামায়াতের প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬ সালেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তখন তারা বলেছে, এটা তাদের অনেক পুরোনো প্রতীক। এই প্রতীক নিয়েই ১৯৭০ সালেও ভোট করেছিল। ইসি তখন এই প্রতীক বহাল রেখেছিল।

২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

তখন উচ্চ আদালতের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ফলে নির্বাচনে দল বা প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ হয়ে যায়। যে কারণে ২০১৮ সালে জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে হয় ধানের শীষ প্রতীকে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় জামায়াতকে নিষিদ্ধ দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর উঠে যায় সেই নিষেধাজ্ঞা।

চলতি বছরের জুনে আদালতের নির্দেশে নিবন্ধনসহ আবারো দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পায় জামায়াত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রতীকের পক্ষে এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে দলটি।
প্রতীক নিয়ে ইসির কর্মকাণ্ড

বাংলাদেশে বর্তমান নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৫৪টি। গত সেপ্টেম্বরে গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগ নামে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন।

ওই দুইটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১১৫টি প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করে ইসি। যেখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ৬৯টি প্রতীকের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত করা হয় ৪৬টি প্রতীক।

নিবন্ধনের আবেদনের পর ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপির পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফায় শাপলা প্রতীক চাওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন প্রতীকের তালিকায় শাপলা রাখেনি। যে কারণে গত সেপ্টেম্বরে এনসিপি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেলেও দলটির নিবন্ধনের চূড়ান্ত গেজেট আটকে আছে প্রতীক ইস্যুতে।

গত কয়েকদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনসিপির টানাপড়েন তৈরি হয়েছে এই প্রতীক ইস্যুতে। দলটি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে এই প্রতীক না পেলে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে তারা।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তারা অতীতের উদাহরণ টেনে বলছেন, প্রতীক নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির টানাপড়েন তৈরি হলেও তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।

সাবেক ইসির অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে কাদের সিদ্দিকী যখন নতুন দল করলো তখন তারা গামছা মার্কা চেয়েছিল। কিন্তু ইসির প্রতীক তালিকায় গামছা ছিল না। পরে তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ইসি গামছা প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল।

এবার নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে এনসিপি যখন শাপলা চেয়েছে তখন ঠিক তার এক সপ্তাহ আগে নাগরিক ঐক্যও একই প্রতীক চেয়েছিল। যেটি নিয়েও নানা সংকট চলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক সময় দেখতে প্রায় কাছাকাছি প্রতীক হলে সেটি নির্বাচনি মার্কা হিসেবে বাছাই করতে চায় না নির্বাচন কমিশন। উদাহরণ টেনে বিবিসি বাংলাকে মিজ টুলী বলেন, একবার একটি দল প্রতীক হিসেবে জাহাজ মার্কা চাইলো। সাদা-কালো ব্যালটে দেখতে প্রায় নৌকার মতো হওয়ায় তখন এ নিয়ে ইসিতে আপত্তি জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

একই ভাবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সালে নিবন্ধন পায় বিএনএফ নামে একটি রাজনৈতিক দল। তখন দলটিকে গমের শীষ প্রতীক দেওয়ার কথাও উঠেছিল। সেই খবর পেয়ে তখন ইসিতে আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। তখন নির্বাচন কমিশন বিএনএফকে আর গমের শীষ প্রতীক দেয়নি। এর পরিবর্তে দলটিকে দেওয়া হয় টেলিভিশন। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন যে নতুন প্রতীক তালিকা করেছে সেখানে কম্পিউটারও প্রতীক হিসেবে রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাদা-কালো একই ব্যালটে যদি কম্পিউটার আর টেলিভিশন থাকে তখন অনেক ভোটার বুঝতেই পারবে না কোনটি কি প্রতীক।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট সাদা-কালো হয়ে থাকে। সেই ব্যালটে শাপলা, গোলাপ কিংবা অন্য ফুল দিলেও দেখতে প্রায় একই রকম হয়। আবার নির্বাচনি মার্কা হিসেবে তালিকায় ফুলকপিও রয়েছে। যেটিও দেখতে প্রায় একই রকম।

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না: গোলাম পরওয়ার
৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালো সরকার
পূর্বাঞ্চলের চীফ কমান্ড্যান্ট জিম্মি বাহিনীর সদস্যদের কাছে
শাপলা প্রতীক নিয়ে ফের পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি
প্রকাশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের লেখক ডিরেকটরির নতুন সংস্করণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
পুরান ঢাকায় জবি ছাত্রদল নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১২ সুপারিশ ৬ মানবাধিকার সংস্থার
‘নির্যাতনের মাধ্যমে গেস্টরুম কালচার ধ্বংস করেছে ছাত্রলীগ’
পূর্বাঞ্চলের চীফ কমান্ড্যান্ট জিম্মি বাহিনীর সদস্যদের কাছে
ডিমলায় পার্টনার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনে সিনিয়ার মনিটরিং আফিসার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft