
আমরা কিন্তু প্রতিদিন মুখের যত্ন নেই, ত্বকের যত্ন নেই, কিন্তু হাড়ের যত্নটা ক’জন নেই? হাড়ই তো শরীরের স্তম্ভ, অথচ সেটাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা করি। এই উপেক্ষিত হাড় থেকেই জন্ম নেয় খটমটে নামের একটা রোগ, অস্টিওপোরোসিস। অস্টিওপোরোসিস হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড়ের ভিতরের কাঠামো ধীরে ধীরে পাতলা ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বেশিরভাগ মানুষ মনে করে অস্টিওপোরোসিস শুধু ‘ক্যালসিয়াম না খাওয়ার’ কারণে হয়। আসলে অনেক খাবারই আছে যেগুলো শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের করে দেয় বা হাড়ের গঠনে ব্যাহত করে। প্রথমত, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন চিপস, আচার, সস বা ইনস্ট্যান্ট নুডলস- এসব শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ায়। এতে প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়, ফলে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। একইভাবে ক্যাফেইন বা চা-কফি বেশি খেলে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যায়। পরিমিত পরিমানে আপনি কিছু হারবাল টি গ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু অতিরিক্ত চা কফি গ্রহণ হাড়ের ক্ষয় বাড়ানোর অন্যতম কারন। এছাড়া, বিভিন্ন সফট ড্রিংকস ও কার্বনেটেড পানীয়তে থাকা ফসফরিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামের বিপরীতে কাজ করে, হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে ফেলে। এছাড়াও অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন, বিশেষ করে লাল মাংস ও প্রসেসড মাংস শরীরকে অ্যাসিডিক করে তোলে, যার ফলে শরীর ক্যালসিয়াম টেনে নেয় হাড় থেকে, ফলস্বরূপ হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
অন্যদিকে, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন মিষ্টি, বেকারি আইটেম, সফট ড্রিংকস বা আইসক্রিম ইনসুলিন বাড়িয়ে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ক্যালসিয়াম মেটাবলিজমে বাধা দেয়। ধূমপান ও অ্যালকোহল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে হাড় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। সবশেষে, ফাস্টফুড ও রেডি-টু-ইট খাবারে থাকা ট্রান্সফ্যাট, সোডিয়াম ও ফসফেট হাড়ের জন্য সরাসরি ক্ষতিকর।
এগুলো হাড় থেকে ক্যালসিয়াম চুরি করে নেয় নিঃশব্দে। বয়স বাড়লে শরীরে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, যা হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। হরমোনের ভারসাম্য রাখতে শরীরের দরকার ভালো ফ্যাট, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার। মূলত হাড়ের সুরক্ষায় এমন খাবারগুলো সবচেয়ে কার্যকর, যা ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D, প্রোটিন, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যেমন- দুধ, দই ও পনির ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। ছোট মাছ (কাঁটাসহ), ডিমের কুসুম ও মাছের তেল প্রাকৃতিক ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ সরবরাহ করে। শাকসবজি ও রঙিন ফল হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ভিটামিন K, ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেয়। বাদাম, তিল ও কুমড়ার বীজ ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক সরবরাহ করে, যা হাড়কে শক্ত রাখে। ভিটামিন D পাওয়ার জন্য সূর্যের আলো আর আপনার যেন দেখা হয় প্রতিদিন, এমন লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হতে হবে।
সঠিক খাবারই আপনার সুস্থতার দিকে প্রথম ধাপ। এই ‘World Osteoporosis Day’ তে আপনার সুস্বাস্থ্যের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার আছে সর্বদা আপনার পাশে।
লেখক: সৈয়দা রূহানী, সিনিয়র নিউট্রিশনিস্ট (আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার)
আজকালের খবর/ওআর