
অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় যুবদল নেতা মোহাম্মদ ফারুককে তুলে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) লোহাগাড়া উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুকের বাবা শহীদ মিয়া এ অভিযোগ করেন।
শহীদ মিয়ার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুবদল নেতা ফারুকের ছেলে ফয়সাল উদ্দিন। ফারুক বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর ছেলে ফয়সাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার বাবা অসুস্থ দাদাকে চিকিৎসা শেষে লোহাগাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় এনসিপি নেতা জহির উদ্দিনের নেতৃত্বে আরিয়ান হাসান, টুটুল, খালেদ, আরিফুল্লাহ ও আরফাতসহ ৭-৮ জন এসে তার বাবাকে মারধর করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের করে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে সেটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লোহাগাড়া পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কয়েক মাস আগে এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরোধিতা সংক্রান্ত মামলা দায়েরের জের ধরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তার পরিবার জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রুবাইয়াত ফারহানা সাংবাদিকদের জানান, বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ফারুককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে এবং হাতের হাড় ভেঙে গেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত এনসিপির লোহাগাড়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী জহির উদ্দিন বলেন, স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ার পর তার কাছ থেকে ১০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তার মুঠোফোনে মাদকের তথ্য লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। বরং আমাকে ষড়যন্ত্র করে জড়ানো হচ্ছে। গণপিটুনি থেকে ফারুককে বাঁচাতে কয়েক ঘণ্টা পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরে স্থানীয়রা তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ লোহাগাড়া পোস্ট অফিস এলাকার একটি কক্ষ থেকে ফারুককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় এনসিপি নেতা জহির উদ্দিনসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা পুলিশকে একটি মুঠোফোন ও ১০টি ইয়াবা দেন। দাবি করেন, সেগুলো ফারুকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ফারুককে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে।
আজকালের খবর/ওআর