সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘গণভোট না অর্ডিন্যান্স: প্রসঙ্গ জুলাই সনদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক।
শনিবার সকালে আয়োজিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. পারভেজ হোসেন।
বৈঠকটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী ও বাংলাদেশ সরকারের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ুন কবির তানিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই আন্দোলনকে আমরা বিপ্লবে রূপ দিতে পারিনি, এটি একটি বেদনাদায়ক বিষয়।’
তিনি আরো আহ্বান জানান, রাজনৈতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে জুলাই সনদকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কি-নোট স্পিকার ব্যারিস্টার এস এম শাহরিয়ার কবির বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই জনগণ প্রতারিত হচ্ছে। যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে। তাই জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দৃঢ় না হলে ভবিষ্যতেও জনগণ প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী নেতা অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘সরকার ও রাজনৈতিক দলের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা এবং কার্যকর পদক্ষেপই এই সনদকে জনগণের পক্ষ থেকে একটি সাংবিধানিক দলিলে রূপ দিতে পারে।’
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব মূলত ছাত্র ও ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। অথচ সরকার ছাত্রদের একাডেমিক উন্নয়ন ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের জন্য কোনো কমিশন গঠন করেনি। ফ্যাসিবাদের পথ রোধ করতে হলে জুলাই সনদকে নিয়ে গণভোট অপরিহার্য।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী মনে করেন, সনদের বৈধতা ও গণসমর্থন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী অভিযোগ করেন, ‘যত সরকার এসেছে তারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করেছে। রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। জুলাই সনদের আইনগত বৈধতা না থাকলে ভবিষ্যতের সরকারও এটিকে গুরুত্ব নাও দিতে পারে।’
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদী বলেন, ‘জুলাই সনদ রচনার সময় শহীদ ও আহতদের মতামত না নিয়ে শুধু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি সনদের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
ব্যারিস্টার সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে প্রায়ই গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি অপরিহার্য।’
অন্য বক্তাদের মধ্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্টের ঘোষণাপত্রকে ভুলভাবে জুলাই সনদ বলা হচ্ছে। প্রকৃত সনদ তৈরিতে সব অংশীদারের মতামত প্রতিফলিত করতে হবে এবং গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানে এর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।’
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘সমালোচনা নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জুলাই সনদকে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।’
ব্যারিস্টার শারমিন জাহান মিলি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য থাকলে গণভোট নয়, বরং অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমেও সনদের বৈধতা দেওয়া সম্ভব।
গণধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন মানুষ গণভোট বোঝে না। কিন্তু আমরা গুরুত্ব বোঝাতে পারি এবং দাবি তুলতে পারি।'
আলোচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, আইনজীবী, সামাজিক সংগঠক, সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।