আরো ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিকল্পনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৭ পিএম
দেশে নতুন করে আরো অন্তত ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরির পরিকল্পনা করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ৫০৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত ও পুনঃস্থাপন করা হবে। নতুন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো করা হবে জাইকার অর্থায়নে। আর মেরামত ও পুনঃস্থাপনের কাজে অর্থায়ন করবে ওপেক। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আজ বুধবার দুপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তারুজ্জামান এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আমরা যখন কমিউনিটি ক্লিনিক পরিকল্পনা করেছিলাম, তখন হিসাব ছিল প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য অথবা ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বের মধ্যে একটি ক্লিনিক থাকবে। কিন্তু দেশের বাস্তবতায় সেটা সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। পাহাড়ি এলাকা, হাওর কিংবা চর অঞ্চলে কোনো কোনো জায়গায় ১০ হাজার থেকে ১৫  হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক রয়েছে। ফলে সেখানকার কর্মীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ঘাটতি পূরণেই আমরা নতুন করে কমিউনিটি ক্লিনিক বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। 

আক্তারুজ্জামান বলেন, আমাদের জন্য সুখবর হলো-জাইকা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, সেই অর্থায়নে অন্তত ৫০০টি নতুন ক্লিনিক আমরা স্থাপন করতে পারব। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবেদন নিচ্ছি। যারা জমি দিতে আগ্রহী, তারা যদি নোটারি করা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আন্ডারটেকিং দেন, আমরা তাদের আবেদন অগ্রাধিকার দিয়ে লিস্ট করছি। জমি পাওয়া গেলে দ্রুত সেই এলাকায় নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। 

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাস্টের মাঠ প্রশাসনের পরিচালক আসিফ মাহমুদ বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এখন শুধু সেবা দেওয়ার জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। এজন্য আমরা নিজস্ব ভবন নির্মাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি। এর ফলে সিএইচসিপি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন। একইসঙ্গে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কোথায়, কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন তা সহজে ট্র্যাক করা যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো। বর্তমানে ৫৪ শতাংশ সিএইচসিপি নারী হলেও আমরা সেটিকে ধাপে ধাপে ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি পর্যায়ে উন্নীত করতে চাই। শুধু সংখ্যা বাড়ানোই নয়, আমরা তাদের ধাত্রীবিদ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেব, যাতে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হয়। এছাড়া বিশেষ অঞ্চল যেমন হাওর, চর, উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় প্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ জন মানুষের জন্য একটি করে নতুন ক্লিনিক স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়েছি।

আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, কমিউনিটি  ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে সৌরশক্তির মাধ্যমে। ভবিষ্যতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উচ্চতর স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হবে, যাতে দূরবর্তী এলাকার মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পেতে পারেন। একইসঙ্গে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় দেশীয় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হবে। প্রতি বছর গ্রামীণ এলাকার বয়স্ক জনগণের জন্য অন্তত একবার করে বেসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও আমাদের আছে।

কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (সিএইচসিপি) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল কনসেপ্ট হলো প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া। এখানে বড় কোনো ওষুধ থাকে না-অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সাধারণত প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন বা এন্টারসিড জাতীয় কিছু ওষুধ দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সিএইচসিপিরা নিরাপদভাবে স্বাভাবিক ডেলিভারি করাতে পারেন। 

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক মানেই হলো কমিউনিটি-ভিত্তিক সেবা। তাই সম্প্রতি ম্যাটস (মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) নিয়োগের যে প্রস্তাব আসছে, আমরা সেটার বিরোধিতা করছি। কারণ ম্যাটসরা মূলত ডাক্তারদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকে তো কোনো ডাক্তার নেই। ফলে তারা এখানে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবেন না। তাছাড়া তাদের বেশিরভাগই ওই এলাকার স্থানীয় নন। অথচ আমরা চাই যে প্রতিটি ক্লিনিক পরিচালনা করবেন স্থানীয় নারী সহকর্মীরা, যারা কমিউনিটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব নয়। 

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে মোট ১৪ হাজার ৪৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপির পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী সপ্তাহে দুই দিন সেবা দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৩ থেকে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে সিএইচসিপির সংখ্যা ১৩ হাজার ৯২৩ জন।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ
এনবিআরে বড় ধরনের রদবদল, ৫৮ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসিতে নতুন ৩ সদস্য নিয়োগ
নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই : আসিফ মাহমুদ
সাদাপাথর লুটপাটে ১৩৭ জন জড়িত: তদন্ত প্রতিবেদন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ডিমলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
হিট প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা ইউজিসির
বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজে থাকছে নারী আম্পায়ার
উখিয়া থানার সামনে শিক্ষক ও বিক্ষুব্ধ জনতা অবস্থান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
অদ্ভুত এক ঘটনা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘটতে যাচ্ছে: মেজর হাফিজ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft