জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির বিশেষ দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে এসেছেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে এই পাঁচ নেতা কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
তাঁরা হলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। সঙ্গে তাসনিম জারার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহও রয়েছেন। তিনি এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার আগমন রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা তৈরি করেছে।
বিমানবন্দর ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান থেকে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে নেমে এনসিপির পাঁচ নেতা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার ইনানী সৈকতের পাঁচ তারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-তে (আগের নাম রয়েল টিউলিপ) যান। হোটেলের মাইক্রোবাসে তাঁদের বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার আগমনের বিষয়টি প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা হয়নি।
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে কক্সবাজারে গিয়েছেন এই পাঁচ নেতা।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তির বিশেষ দিনে হঠাৎ করে এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতার কক্সবাজার আগমন এবং শহর থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরের পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থানের ঘটনা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে তাঁদের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠকের কথা শুনে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়ছে। তবে পিটার হাসের উপস্থিতির বিষয় নিয়ে তিনি সন্দিহান। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
পিটার হাস বর্তমানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে যুক্ত মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
বেলা সোয়া তিনটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়, সি পার্লের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। বিএনপির কিছু কর্মী-সমর্থককেও সেখানে দেখা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ফোন করা হলে তিনি হাসনাত আবদুল্লাহকে কথা বলতে দেন। হাসনাত ফোনটি দেন সি পার্লের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামানকে।
কামরুজ্জামান পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি বলেন, পিটার হাস বা এ রকম কেউ তাঁদের হোটেলে আসেননি।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এখন টিভিকে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, তাঁরা ঘুরতে কক্সবাজার গিয়েছেন। পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি গুজব ও অপপ্রচার।
এদিকে, কক্সবাজারে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ইনানী সৈকতের বিলাসবহুল সী পার্ল হোটেলের গেটের সামনে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, গত ১ বছর ধরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তবে এই ষড়যন্ত্রকে বরদাশত করা হবে না। আমাদের লড়াই চলছে এবং আগামীতেও চলবে।
তারা বলেন, কিছু কুচক্রী মহল, যারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা এখানে বসে (সী পার্ল হোটেল) বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সেটা কখনো হতে পারে না। এটা আমরা বরদাশত করব না।
বক্তারা বলেন, আপনারা বাংলাদেশের দক্ষিণপ্রান্তে এসে ষড়যন্ত্র করবেন, বিলাসবহুল হোটেলে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করবেন—সেটা এই জনতা মেনে নেবে না। শুধু এখানে নয়, বাংলাদেশের যেখানেই ষড়যন্ত্র করা হবে।
সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশকে আরো একটি ওয়ান-এলেভেনের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। গতকাল এক উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে নাকি আরেকটা ওয়ান-এলেভেন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা গত ১৬ বছরে রক্তের বিনিময়ে রাজপথে থেকে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছি, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করব না।
আজকালের খবর/ এমকে