যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচকভাবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। ওয়াশিংটনে চলমান আলোচনার দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে স্পষ্ট ‘ইতিবাচক ইঙ্গিত’ মিলেছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের মতবিরোধ প্রায় মিটে গেছে এবং একটি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা প্রবল।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক হার সীমিত রাখতে ১০ থেকে ২০ শতাংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিসর নির্ধারণের পেছনে আন্তর্জাতিক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ হারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমঝোতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে শুধু ইতিবাচক মনোভাবই দেখায়নি, বরং এটি বাস্তবায়িত হলে তা হবে 'সন্তোষজনক মাত্রায়'। আলোচনায় যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যেখানে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে, সেখানে চূড়ান্ত ধাপে একটি স্পষ্ট ও ইতিবাচক বার্তা মিলেছে—বাংলাদেশের অবস্থান গুরুত্ব পেয়েছে।'
এর আগে, প্রথম দফার আলোচনায় অংশ নেওয়া বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, মার্কিন পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ওপর কম শুল্ক আরোপ করা হবে।
বাংলাদেশ এ আলোচনার আগে ভারসাম্য রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার, ৭ লাখ টন গম, এলএনজি, তুলা, ওষুধ, মূলধনী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক কাঁচামাল এবং কৃষিজ পণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি। গত সোমবার পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেয় এই আলোচনার জন্য।
অন্যদিকে ভারত এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি। বরং দেশটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। একইসঙ্গে, ভারতের ছয়টি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যেগুলো ইরান থেকে জ্বালানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে—আলকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড, জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, প্রেসিডেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড এবং কাঞ্চন পলিমারস।
এই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টিকে এর পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজকালের খবর/ এমকে